চট্টগ্রাম

মিটার রিডারদের কেরামতি’তে ১৫ হাজার ইউনিট গায়েব!

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে নাছির আহমদ (৪৭) নামে এক পিডিবি গ্রাহকের ৮টি মিটারের পাওনা ১৫ হাজার ৩৩৯ ইউনিট বিদ্যুৎ সমন্বয় না করে নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে মইজ্জ্যারটেক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) উপ-কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

এমনটি গত দুই মাস যাবৎ ওই গ্রাহককে নানা কেরামতি দেখিয়ে মিটার রিডিং সম্বনয় না করে প্রি-প্রেইড মিটার পরিবর্তনে বাধ্য করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বুধবার (১৫ মে) নগরীর আগ্রাবাদস্থ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রাহক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর গ্রামের গ্রাহক নাছির আহমদ এর নিজ বাড়ি ও ভাড়া ভবনে মোট ১১টি মিটার রয়েছে। এরমধ্যে ৩টি মিটারে অফিস পাওনা রয়েছে ৪ হাজার ৬০৬ ইউনিট। আর ৮টি মিটারে গ্রাহক পাওনা রয়েছে ১৫ হাজার ৩৩৯ ইউনিট।

এরপরেও মইজ্জ্যারটেক পিডিবি অফিস পরিকল্পিতভাবে পূর্বের মিটার রিডার আব্দুল গণি থাকাবস্থায় মিটার পরিবর্তনের দুই মাস আগে নাছির কে নিযুক্ত করেছেন। এমনকি গ্রাহকের মিটারে অতিরিক্ত বিল করে দুই মাস পরে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুনরায় আব্দুল গণিকে নিযুক্ত করেন। ফলে, গ্রাহক কে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়।

গত ২৬ শে মার্চ গ্রাহক বিষয়টি কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক পিডিবি অফিসে বার বার জানান সত্ত্বেও মিটার রিডিং সমন্বয় না করে প্রি-প্রেইড মিটার পরিবর্তনে বাধ্য করেন বলে জানান।

অভিযোগে আরও জানা যায়, গ্রাহক নাছির আহমদ এর ০১৩০৩৪ নম্বর মিটারে পাওনা রয়েছে ১ হাজার ২৩ ইউনিট, ০১৩০৩৫ নম্বর মিটারে পাওনা ১ হাজার ২৬৬ ইউনিট, ১৯৫৬৫২ নম্বর মিটারে পাওনা রয়েছে ২০৭ ইউনিট, ০১৩০৩০ নম্বর মিটারে পাওনা ৭ হাজার ২১৮ ইউনিট, ৭৯৭৪৬৯ নম্বর মিটারে পাওনা ১ হাজার ৭৪ ইউনিট, ০৮৩৭০১৭ নম্বর মিটারে পাওনা ৩ হাজার ৩০৭ ইউনিট, ৪৫৭১৬৪ নম্বর মিটারে পাওনা ৭৩ ইউনিট ও ০১১৯৭৭ নম্বর মিটারে গ্রাহকের পাওনা ১ হাজার ১৭১ ইউনিট সহ মোট ১৫ হাজার ৩৩৯ ইউনিট। যা বিদ্যুৎ বিল আকারে সমন্বয় করার আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী গ্রাহক নাছির আহামদ বলেন, ‘কাগজে কলমে নিয়ম রয়েছে গ্রাহকের উপস্থিতিতে মিটার রিডিং নেয়ার কিন্তু তারা যে কখন এসে রিডিং নিয়ে যান তা হয়তো অধিকাংশ গ্রাহকেরই জানা নেই। তাছাড়া আমাদের কাছে পিডিবি অফিস ইউনিট বিল বকেয়া পেলে যে কাহিনী শুরু করে তা বলার মতো না। কিন্তু গ্রাহক যে হাজার হাজার ইউনিট পায় তা সমন্বয় না করে এখন ডিজিটাল মিটার আর স্মার্ট মিটার হজম করাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন,’ পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকায় আমাদের তিনতলা বিশিষ্ট নুর মার্কেটে ৬২ টি দোকান রয়েছে। মার্কেটে চলাচলের মূল রাস্তার মাঝখানে একটি খুঁটি রয়েছে। যার জন্য মার্কেটে মালামাল লোড-আনলোড ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বৈদ্যুতিক খুঁটিটি পাশে সরানোর জন্য পিডিবিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, ‘এ বিষয়টি পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল অফিস থেকে জানানো হয়েছে। গ্রাহক সেবায় বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত বলেন,’ কর্ণফুলীর একজন গ্রাহকের এমন অভিযোগ পেয়েছি। তাৎক্ষণিক বিষয়টি কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক পিডিবি উপ-কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক উপ-কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য বলেন, ‘আসলে মিটার গুলো লাগাচ্ছে সরাসরি ঢাকার লোক। আমরা মাইকিং করে বলেছি। এসব মিটার লাগাতে যাতে কেউ টাকা না দেয়। এ রকম কেউ যদি টাকা দিয়ে থাকে। তাহলে আমাদের কাছে নাম ঠিকানাসহ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত বলেন, ‘কর্ণফুলীতে গ্রাহক ১৭ হাজার নয়। পটিয়াসহ ৪৩ হাজার ৬৮৯ টি প্রি-পেইড মিটার বসাবে। ঢাকা থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রি-পেইড মিটারগুলো বসানো হচ্ছে। এতে কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন চীনা কোম্পানি হেক্সিং।’

তিনি আরও বলেন, ‘কর্ণফুলীতে ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহক এটি কে বলছে আপনাদের? মোট গ্রাহক আরো বেশি। আমার জানা মতে ৬০ হাজারের অধিক। আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে। কেননা এর আগে আমরাও প্রি পেইড মিটার বসিয়েছি। যেগুলো বাদ ছিলো সেগুলো এখন ঢাকার একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে বসানো হচ্ছে।’

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহন্ত এক পর্যায়ে বিনামূল্যে মিটার গুলো বিতরণের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এসব মিটার একদম বিনামূল্যে লাগানোর কথা। কিন্তু কারা টাকা নিচ্ছে আমরা জানি না। আমি খবর নিচ্ছি। আর কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তবে আমরা ওই প্রজেক্টের লোকজনের সাথে কথা বলবো। পাশাপাশি ব্যবস্থা নেবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *