মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বিদ্রোহীদের দখলে
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দাবি করেছে, জান্তাকে হটিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইন দখলে নিয়েছে তারা। শুধু তা-ই নয়, রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি, প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল পুনরুদ্ধার এবং দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ১৪২টি সামরিক চৌকিও তাদের দখলে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির প্রতিবেদনে এ খবর দেওয়া হয়।
আরাকান আর্মি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৫টিতেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এ সময়ে তারা জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ১৪২টি সেনা ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এর বাইরে তারা চিন রাজ্যের পালেতওয়ার নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আরাকান আর্মি ঘোষণা দেয়, তারা বিগত ৪৫ দিন ধরে টানা যুদ্ধ করে যাচ্ছিল জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। অবশেষে তারা রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েসহ অন্য আরও ১৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পাশাপাশি পালেতওয়ার ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেরও দখল নিয়েছে তারা।
এদিকে, বেশির ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিলেও জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ম্রউক উ, পাকতাও ও মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। গত বুধবার ম্রউক উ শহর কোয়ে থাউং প্যাগোডার কাছে আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। আরাকান আর্মির হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে জান্তা বাহিনী বিমান হামলা শুরু করে।
অপর দিকে, চলতি সপ্তাহে মংডু ও পাকতাওয়ে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর বাইরে পালেতওয়ায় জান্তা বাহিনীর প্রধান ঘাঁটিতেও আরাকান আর্মির হামলা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পালেতওয়ার ত্রাউনাইং ও নোনে বু দুর্গ থেকে জান্তা বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি।
কেবল রাখাইনেই নয়, জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারজুড়েই জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ সাফল্য লাভ করছে। শান প্রদেশের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত জাতিগত সংখ্যালঘু যোদ্ধারা। কয়েক দিন আগে চীন অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার আশ্বাস দেওয়ার পর গত শনিবার এ ঘোষণা দেয় সংখ্যালঘু যোদ্ধারা।
মিয়ানমারে আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) অক্টোবরের শেষের দিকে যৌথ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যজুড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত তিনটি জোটভুক্ত দল বলছে, তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থান এবং সীমান্ত কেন্দ্রগুলো দখল ফেলেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে এটাই জান্তা বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক চ্যালেঞ্জ।