মীরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস আজ
মীরসরাই হানাদার মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে মীরসরাইকে হানাদার মুক্ত করে।
এদিন সকালে সুফিয়া রোড ওয়ার্লেস স্টেশন থেকে একটি পাক বাহিনীর জিপ তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎ পেতে থেকে শত্রুর অবস্থান নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে এ খবর পাঠানো হয়।
সকাল ১০টা নাগাদ মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের বিএলএফ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাসহ প্রায় দুইশত মুক্তিযোদ্ধা মীরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকি তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে একযোগে ঝটিকা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়। পাক সেনাদের অবস্থান ছিল হাইস্কুল (বর্তমান মীরসরাই সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়)। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে দেখলেন পাক সেনারা পালিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে পাক সেনাদের আটটি রাইফেল উদ্ধার করে। পাক সেনারা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে বলে পরে জানা যায়।
মীরসরাই শত্রুমুক্ত হয়েছে এ কথা দ্রুত ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। মুহূর্তেই চতুর্দিক থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মীরসরাই সদরে মিছিল আসতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই অসংখ্য জনতার ঢল নামে মীরসরাই হাই স্কুল মাঠে। মৌলভী শেখ আহম্মদ কবির কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ঘোষণা করা হয় ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল মীরসরাই ভূখণ্ড পাক বাহিনীমুক্ত একটি স্বাধীন এলাকা। সে থেকে ৮ ডিসেম্বর মীরসরাইয়ে উদযাপিত হয়ে আসছে শত্রুমুক্ত দিবসটি।
হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন, মীরসরাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মীরসরাই উপজেলা শাখা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সব উপজেলার মধ্যে একমাত্র মীরসরাই উপজেলা থেকে বেশি মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মীরসরাইয়ের রেল স্টেশন সড়কের মাঝামাঝি লোহার পুল নামক স্থানে ঘাতক পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা অসংখ্য নারী–পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। ওই সময় এই লোহার পুল এলাকা ছিল ওই এলাকার লোমহর্ষক একটি জায়গার নাম। যার কথা মনে পড়লে এখনো মানুষ আঁতকে উঠে। বর্তমানে তালবাড়িয়া এলাকায় বধ্যভূমিতে জেলা পরিষদের অনুদানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।