চট্টগ্রাম

মেয়রের আবদার রাখলো না মন্ত্রণালয়!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রেষণে এসে প্রায় ১৩ বছর ধরে কর্মরত বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সালমা খাতুন। কর্মস্থলে তার অনিয়মের অভিযোগ গেছে দুদক পর্যন্ত। তদন্ত করে যার প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে সংস্থাটি। অধিকতর তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। এরপরও চসিক না ছাড়তে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন ওই প্রকৌশলী। ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে চসিকে রাখতে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) দিয়েছেন খোদ সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে শেষপর্যন্ত মেয়রের আবদার রক্ষা করেনি মন্ত্রণালয়। ২০ দিন আগে প্রকৌশলী সালমা খাতুনকে হাটহাজারী পৌরসভায় বদলি করে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী চসিক ছাড়তে হয়েছে তাকে।

চসিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ড. সালমা সিদ্দিকা স্বাক্ষরিত এক আদেশে সালমা খাতুনকে বদলি করা হয়। ওই আদেশে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। অন্যথায় তিনি ৮ জুলাই তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ের জারি করা বদলি আদেশ বাতিল করে সালমা খাতুনকে চসিকে বহাল রাখার জন্য গত ২৪ জুন মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠান চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এই ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে গত ৪ জুলাই প্রশাসনিক কারণে সহকারী প্রকৌশলী সালমা খাতুনের বদলি আদেশ বাতিল করা যাচ্ছে না জানিয়ে চসিক মেয়রকে চিঠি পাঠান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুর রহমান।

অথচ কোভিডকালীন চসিকের আইসোলেশন সেন্টারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদনে সহকারী প্রকৌশলী সালমা খাতুনের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ও ‘সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়—‘ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে সরাঞ্জামাদি ক্রয় করে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন’। এ নিয়ে অধিকতর তদন্ত করছে দুদক। দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালককে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামত দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী সালমা খাতুন ‘অনুষ্ঠানে আছি, পরে কথা বলবো’ জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন৷ পরে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘বদলি হওয়ার পরেও কারোরই চসিকে থাকার সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী তাকে (সালমা খাতুন) ৮ তারিখের ভেতর চলে যেতে হবে এবং তিনি আর চসিকে নেই। যেহেতু মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন প্রশাসনিক কারণে বদলি আদেশ বাতিল করা যাচ্ছে না সেহেতু এ কর্মকর্তা চাইলেও আর চসিকে থাকতে পারবেন না। এই বিষয়গুলো আমি এখন কড়াকড়িভাবে দেখবো। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চসিক থেকে বদলি হওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তাদের জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন চসিক মেয়র। এমনকি মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়েও এক কর্মকর্তার জন্য কয়েক দফা ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চসিক মেয়রের ডিও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয় বেজায় বিরক্ত। কথায় কথায় যার তার জন্য ডিও লেটার পাঠিয়ে দেন তিনি। এ বিষয়গুলো ভীষণ দৃষ্টিকটু। এর বাইরে বদলির আদেশ যাতে কার্যকর না হয়, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান চসিকের কর্মকর্তারা। এ বিষয়গুলো প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন বদলির পরেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ছাড়তে চান না বদলি হওয়া কর্মকর্তারা। সেটা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এমনও রেকর্ড আছে চসিক মেয়রের ডিও লেটার কিংবা তদবিরে কাজ না হলে শেষপর্যন্ত আদালতেও গেছেন। অর্থাৎ যেকোনো মূল্যে চেয়ার না ছাড়ার ঘটনা নিত্যদিনকার ঘটনা হয়ে গেছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে পটিয়া পৌরসভা থেকে প্রেষণে তৎকালীন উপ–সহকারী প্রকৌশলী সালমা খাতুনকে চসিকে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে তিনি সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। তবে চসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের জন্য সহকারী প্রকৌশলীর কোনো পদ নেই। এরপরও চসিকেই বহাল থাকেন তিনি। উল্টো ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ছিল চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে। এ বিষয়ে গত ২৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে এ কে এম হেলাল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগও দেন।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে ‘কিছুই জানেন না’ মন্তব্য তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হাশেমের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *