খেলা

মেসি-নেইমারবিহীন মঞ্চে ‘নায়ক’ এমবাপ্পে

একই মঞ্চে দুই নায়ক ঠিক খাটে না। সেকারণেই কিনা লিওনেল মেসির ছায়া থেকে বেরোতে বার্সেলোনা ছেড়েছিলেন নেইমার! ওদিকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের মতোই অবস্থা হয়েছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের। নেইমার পিএসজিতে থাকায় মূল চরিত্রে পাকাপাকি বসা হয়নি তার। পরে মেসি প্যারিসে আসায় আরও দুর্বল হয়ে যায় তার ভূমিকা।

সময়ের পালাবদলে মেসি-নেইমারের কেউই ইউরোপে নেই। এইসময় চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজি মুখোমুখি হচ্ছে দুই তারকার সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার। যেই মঞ্চে ফরাসি ক্লাবটির মূল নায়কের ভূমিকায় এমবাপ্পে।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (১০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টায় পার্ক ডু প্রিন্সেসে প্রথম লেগে মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা-পিএসজি। এ নিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ১৩বার দেখা হচ্ছে দল দুটির। আগের ১২বারের মধ্যে প্রথমটি, অর্থাৎ ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের কোয়ার্টার ফাইনাল বাদ দিলে বাকি সব ম্যাচে বার্সেলোনার সঙ্গী ছিলেন মেসি।

সময় পেরিয়ে গেছে অনেক। মেসিকে ছাড়া বার্সেলোনা খেলছে ২০২১ সাল থেকে। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে মেসি ও নেইমারকে ছাড়া হাঁটছে পিএসজি। অথচ একটা সময় বার্সেলোনা-পিএসজির মুখোমুখি লড়াইয়ে মুখ্য চরিত্রে থাকতেন তারা। সেসময় এমবাপ্পেও ছিলেন; নিয়মিত গোল করতেন, ব্যবধান গড়ে দিতেন। তারপরও ফুটবল বিশ্বে প্রচারের আলোতে মেসি ও নেইমারের উপস্থিতি ছিল বেশি।

এ কারণে প্যারিস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নাকি নিয়েছিলেন এমবাপ্পে। পিএসজিতে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারবেন, এই ‘শর্ত’ দিয়ে এখনও ক্লাবটিতে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গত গ্রীষ্মের দলবদলে মেসি ইন্টার মায়ামি ও নেইমার আল হিলালে চলে যাওয়ায় গোটা সাম্রাজ্য তার দখলে। সেই সাম্রাজ্যের পরিধি কতটা বাড়াতে পারেন, সেটির বড় পরীক্ষার সামনে এবার এমবাপ্পে।

ফরাসি স্ট্রাইকারের সামর্থ্য নিয়ে কারও মনে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বাদ কখনও পাওয়া হয়নি তার। মেসি ও নেইমারকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েও ইউরোপিয়ান ট্রফির আক্ষেপ ঘুচাতে পারেননি। এবার তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে। বার্সেলোনার দুশ্চিন্তা তাকে ঘিরেই। যদিও কাতালান কোচ জাভি গোটা দলকেই হুমকির মনে করছেন, “অবশ্যই কিলিয়ান এমবাপ্পে দারুণ খেলোয়াড়। তবে এই দলে আছে উসমান দেম্বেলে, কোলো মুয়ানি, ভিতিনিয়া… সবাই মিলে দারুণ এক দল। এমবাপ্পে দুর্দান্ত স্কোরার। তবে আমরা রক্ষণভাগ নিয়ে প্রস্তুত আছি।”

জাভির চোখে সেমিফাইনালে দৌড়ে ফেভারিট পিএসজি, “দেম্বেলেকে (বার্সেলোনায়) ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এটা তার সিদ্ধান্ত যে প্যারিসে আসবে। তার মতো আরও অনেক খেলোয়াড় আছে পিএসজিতে। এ কারণেই তারা ফেভারিট (সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে)। তাছাড়া ওদের দলে আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।”

সবশেষ লড়াইয়েও বার্সেলোনাকে হতাশ করেছিল পিএসজি। ২০২০-২১ মৌসুমে শেষ ষোলোতে দেখা হয়েছিল বার্সেলোনা-পিএসজির। ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পেই কাতালানরা বিধ্বস্ত হয়েছিল ৪-১ গোলে। পরে প্যারিসে গিয়ে ড্র করেছিল ১-১ গোলে। এবার সেই প্যারিসেই প্রথম লেগে আতিথ্য নিতে যাচ্ছে জাভির দল।

মাঠে খেলোয়াড়দের লড়াইয়ের সঙ্গে ডাগআউটের লড়াইটাও জমজমাট হতে যাচ্ছে। ফরাসি ক্লাবটির কোচ এখন লুইস এনরিকে, যিনি একসময় ছিলেন বার্সেলোনার দায়িত্বে। খেলোয়াড় হিসেবে আট বছর কাটানোর পর তিন বছর ছিলেন কোচের দায়িত্বে। এই সময়ে তার অধীনে বার্সেলোনা জিতেছে তাদের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ফলে কাতালান ক্লাবটি তার খুব ভালো করে চেনা। এতটাই যে, বর্তমান কোচ জাভির চেয়েও বার্সেলোনার ফুটবল-দর্শন ভালো করে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে এনরিকের দাবি, “কোনও সন্দেহ ছাড়াই আমি এটা বলতে পারি। আপনি তথ্য দেখুন: বল পজেশন, গোলের সুযোগ তৈরি, হাইপ্রেস, শিরোপা- সব কিছুতেই বেশি। এটা কোনও মতামত নয়। অন্য কিছু হয়তো ভিন্ন কথা বলতে পারে, তবে পরিসংখ্যান দেখলে আমার কোনও সন্দেহ নেই (জাভির চেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন বার্সেলোনার ফুটবল স্টাইল)।”

এবার দুই কোচ একই দর্শন নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে পিএসজি পাচ্ছে না আশরাফ হাকিমিকে। কার্ডসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞায় প্রথম লেগে নেই এই রাইটব্যাক। বার্সেলোনা পাচ্ছে না চোট আক্রান্ত গাবি ও আলেহান্দ্রো বালদেকে। সমস্যা আছে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও পেদ্রিকে নিয়ে। দুজনই প্যারিসে গেছেন দলের সঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *