অর্থনীতি

যশোর ইপিজেডে বদলে যাবে অর্থনীতির গতিপথ

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-বেপজা। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে আশার আলো দেখছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে দেড় লাখ ও পরোক্ষভাবে আরও তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।ইপিজেড-সংলগ্ন এলাকায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপামর জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বদলে যাবে যশোরের অর্থনীতির গতিপথ।

পরিকল্পনা কমিশন ও বেপজা সূত্রে জানা যায়, আইআইএফসি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। বেপজা থেকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি-পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্র্রকল্পের কিছু বিষয়ে আপত্তির পর তা সংশোধন করে অনুমোদন দেওয়া হয়।

আরও জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় স্টাডি ট্যুর ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে পিইসি সভায় এই দুই খাতে আপত্তি করে তা বাতিল করতে বলা হয়। তা আমলে নিয়ে বাতিল করে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও একটি জিপ গাড়ি, একটি পিকআপ ভ্যান ও একটি মাইক্রোবাস কেনার প্রস্তাব করা হয়। পিইসি সভায় এসব ব্যাপারে আপত্তি করলে জিপ গাড়ি বাতিল করা হয়েছে। আর কর্মকর্তাদের যাতায়াতে একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান এবং একটি মাইক্রোবাস ভাড়ায় চালানোর কথা বলা হয়।

প্রকল্পটিতে অ্যাপায়ন ব্যয়, স্টেশনারি, সিল ও স্ট্যাম্প খাতে বেশি করে ব্যয় ধরা হয়। এছাড়া ফ্রিজ, কম্পিউটার, স্ক্যানার কেনার ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। তাই পিইসি সভায় এসব ক্ষেত্রেও আপত্তি তুলে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়। আবার কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবনের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই এসব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে বলা হয়। প্রস্তাবে নির্বাহী চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা অফিস কক্ষ নির্মাণেরও কথা বলা হয়। পিইসি সভায় তা বাতিল করতে বলা হয়।

বিশাল আকারের অফিসের প্রস্তাব করলে পিইসি সভায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অফিস স্পেস ও ভাড়ার পরিমাণ বিদ্যমান সরকারি নীতিমালার আলোকে ৫ থেকে ৬ হাজার বর্গফুটের স্পেস করতে হবে। তা আমলে নিয়ে বেপজা থেকে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া এসি ও সিসিটিভি কেনার ক্ষেত্রেও অযৌক্তিক মূল্য ধরা হলে তা সংশোধন করতে বলা হয়।
আলোচ্য প্রকল্পে বিভিন্ন প্রস্তাবে আপত্তি করা হয় পিইসি সভায়। তা সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অনুমোদনের পর একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয় সম্প্রতি। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এর অনুমোদন দেন।

প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে চারটি ছয়তলা বিল্ডিং নির্মাণ, চারতলা একটি সিকিউরিটি ভবন, দ্বিতীয় তলা একটি আবাসিক মসজিদ নির্মাণ, ১০তলা একটি বি-ক্যাটাগরির আবাসিক ভবন, ১০তলা একটি ডি-টাইপের আবাসিক ভবন নির্মাণ, ছয়তলা একটি অফিসার্স ডরমেটরি ভবন ও ছয়তলা একটি স্টাফ ডরমেটরি ভবন, একটি চারতলা পুলিশ আউট পোস্ট ভবন নির্মাণ, একটি চারতলা কাস্টমস ভবন, একটি হেলিপ্যাডও নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনের যাতায়াতে লিফট, সাব-স্টেশন, জেনারেটরসহ আরও অনেককিছু নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বেতন, বাড়িভাড়া, উৎসবভাতা, ভ্রমণভাতা, নববর্ষভাতা রয়েছে। এভাবে বিভিন্ন খাতে সব কাজ শেষ করতে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

এই এলাকার জমির দাম কম হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে খরচ কম হবে। তারপরও প্রকল্পের একক খাত হিসেবে ৫৬৬ একর ভূমি অধিগ্রহণেই সবচেয়ে বেশি ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপরই খরচ হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন খাতে। ৮২ হাজার বর্গমিটার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট ব্যয়ের ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় হবে ভূমি উন্নয়নে। এখানে প্রায় ৭৪ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। তাতে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া এইচবিবি রাস্তাও করা হবে চার লাখ বর্গমিটার। তাতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা বা মোট ব্যয়ের ৭ শতাংশ।

এ ছাড়া বিভিন্ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। সব কাজ শেষ করতে সরকার ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর বেপজার ৩৪তম বোর্ড সভায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যশোরে ইপিজেড স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। চার বছর পর সরকার তাতে অনুমোদন দিল। ফলে পুরোপুরি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে যশোর ইপিজেড। এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপিত হলে লাখো মানুষ কাজ পাবে। ইপিজেডের কারখানা মালিকরাও সস্তায় শ্রমিক পাবেন। এতে উভয়ই লাভবান হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *