ধর্ম

রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান

নিজেকে সব ধরনের গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাস পেয়েও যে ব্যক্তি নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার চেয়ে হতভাগ্য আর কে হতে পারে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যে রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার আগেই তা পার হয়ে গেল। তাই মুমিনের উচিত, পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।

ইবাদতে গুরুত্ব দেওয়া। অধিক হারে নামাজ ও তিলাওয়াতের পাশাপাশি বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, ইস্তিগফার করা। কারণ আল্লাহকে অধিক হাতের স্মরণ করলেও বান্দা গুনাহমুক্ত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, … আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহাপ্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সুরা : আহযাব, আয়াত : ৩৫)

জিকির এমন একটি ইবাদত, যা করতে কোনো কষ্ট নেই, কিন্তু এর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণ অর্জন করা যায়।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে লোক বলে ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবিহামদিহী’ (আমি মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি) জান্নাতে তার জন্য একটি খেজুরগাছ লাগানো হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬৫)

সুবহানাল্লাহ। জান্নাতি গাছ কতটা বিস্তৃত হতে পারে, তার কিছুটা ধারণা নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিসে পাওয়া যায়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে কোনো আরোহী যার ছায়াতলে শত বছর ধরে চলতে থাকলেও তা অতিক্রম করতে পারবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৯৩)

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকের তথ্য মতে, ২০০৮ সালের ১৪ মে ব্রু নামক একটি ঘোড়া যুক্তরাষ্ট্রের পেন ন্যাশনাল রেস কোর্সে ঘণ্টায় ৪৩.৯৭ মাইল গতিতে দৌড়ানোর রেকর্ড করেছে। যদি ঠিক এমন একটি ঘোড়া নিয়ে কোনো অশ্বারোহী একই গতিতে বিরামহীনভাবে চলতে পারত, তাহলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে তার কত দিন লাগত? চলুন সেই হিসাবটা আগে বের করার চেষ্টা করি।

স্পেস ডটকমের তথ্যমতে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় পরিধি হলো ২৪ হাজার ৯০১ মাইল (৪০,০৭৫ কিমি)। যদি আমরা ২৪ হাজার ৯০১ মাইলকে ৪৩.৯৭ মাইল দিয়ে ভাগ করি, তাহলে ফলাফল আসে ৫৬৬.৩১।

তার মানে বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির রেকর্ডকারী ঘোড়া ব্রুর মতো কোনো তেজি ঘোড়া যদি বিরামহীনভাবে তার সর্বোচ্চ গতিতে ছোটে, তাহলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে তার সময় লাগবে ৫৬৬.৩১ ঘণ্টা বা ২৩.৫৯ দিন। বলা যায় প্রায় ২৪ দিন, যা পুরোপুরি এক মাসেরও সমান হয় না। তাহলে ব্রুর মতো একটি তেজি ঘোড়া যদি লাগাতার ১০০ বছর একই গতিতে ছুটতে পারত, তাহলে সে কত মাইল পাড়ি দিতে পারত? এর জন্য প্রথমে আমাদের এক দিনের হিসাব বের করতে হবে। ব্রুর মতো তেজি ঘোড়া যদি ঘণ্টায় ৪৩.৯৭ মাইল পাড়ি দিতে পারে, তাহলে আল্লাহ যদি তাকে ২৪ ঘণ্টা একই গতিতে বিরামহীন চলার শক্তি দিতেন, তাহলে সে ২৪ ঘণ্টায় ১০৫৫.২৮ মাইল যেতে পারত, যা এক বছরে দাঁড়ায় তিন লাখ ৮৫ হাজার ১৭৭.২ মাইলে। তাহলে ১০০ বছরে এমন একটি ঘোড়া পাড়ি দিতে পারত তিন কোটি ৮৫ লাখ ১৭ হাজার ৭২০ মাইল। সুবহানাল্লাহ, হাদিসে বলা হয়েছে, কোনো অশ্বারোহী ১০০ বছর পাড়ি দিলেও সেই গাছের ছায়া অতিক্রম করে শেষ করতে পারবে না। জান্নাতের সেই গাছটি কত বড় হতে পারে তার সঠিক অনুমান করা অসম্ভব। যে জান্নাতের শুধু একটি গাছ এত বড়, সেই জান্নাত জানি কত বড়! এমন অগণিত জান্নাত যিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছেন সেই মহান সত্তা জানি কত বড় ও বড়! আল্লাহু আকবার!

মহান আল্লাহ এত বিশাল পুরস্কার দিচ্ছেন মাত্র এক থেকে দুই সেকেন্ডের আমলের বিনিময়ে।

এ তো হলো রমজানের বাইরের ফজিলত, রমজানে এই সওয়াব আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত : রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির ঘ্রাণ হতেও উত্তম; নিঃসন্দেহে রোজাদার তার প্রবৃত্তি ও পানাহারকে ত্যাগ করে আমার জন্য। তাই রোজা আমারই এবং আমি তার প্রতিদান দেব। প্রতিটি নেকির প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ পর্যন্ত, আর রোজা আমার জন্য, আমিই উহার প্রতিদান দেব। (মুয়াত্তা মালেক : ৬৭৪)

তার মানে রমজানে জিকিরের ফজিলতও বহুগুণে বেড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডে মানুষ অগণিত সওয়াব লাভ করতে পারে। তাই আমাদের উচিত, রমজানের প্রতিটি সেকেন্ডকে মূল্যায়ন করা।

মহান আল্লাহ আমাদের রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *