রাঙামাটির বরকলে ‘অজ্ঞাত রোগ’, ৫ জনের মৃত্যুর খবর
রাঙামাটির দুর্গম বরকল উপজেলায় ‘অজ্ঞাত রোগের’ দেখা দিয়েছে। এ রোগে উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বর্তমানে ১০-১৩ জন এ রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। স্থানীয়রা ও স্বাস্থ্য বিভাগ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজ বুধবার বিকালে একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেবে; তারা সেখানে পৌঁছানোর পর কাল বৃহস্পতিবার থেকে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের ১৪৯ নম্বর গুইছড়ি মৌজার চান্দবিঘাট পাড়ায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় জানুয়ারিতে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে হঠাৎ করে ব্যথা অনুভব হচ্ছে, তীব্র তাপমাত্রায় জ্বর আসে, বমি বমি ভাব হয়। কেউ কেউ রক্ত বমি করে।
জানুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হলেও আক্রান্ত রয়েছে ১০-১৩ জন। তবে গ্রামটি প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। গ্রামের আশপাশে কোনো স্বাস্থ্য সেবা কমপ্লেক্স না থাকায় পাহাড়ি বৈদ্য-করিরাজি চিকিৎসার দ্বারস্ত হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
পাড়াবাসীর বিশ্বাস, এর আগে গ্রামের অনেকেই মিলে একটি পুরনো বটবৃক্ষ কেটে ফেলেছে। গাছটি একটি ‘আধ্যাত্মিক’ বৃক্ষ হওয়ায় যার কারণে স্থানীয়রা অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
চান্দনিঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, ওই এলাকায় গেল কয়েকমাস ধরে একটা অজ্ঞাত রোগ দেখা দিয়েছে। শরীর ব্যাথা হয়, জ্বর, বমি বমি ভাব, রক্তবমি দেখা যাচ্ছে রোগের উপসর্গ হিসেবে। এ পর্যন্ত শিশুসহ ৫ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে আমার বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীও রয়েছে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে কোনো স্বাস্থ্য ক্লিনিক বা চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান না থাকায় স্থানীয়রা কবিরাজি চিকিৎসা চালাচ্ছেন। আমি জানতে পেরেছি এখনো ওই গ্রামের ১৩ জনের মতো আক্রান্ত রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা, ওই এলাকায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে একটি মেডিকেল টিম পাঠানোর কথা রয়েছে।
বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং সাগর জানান, মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। এর আগে বিষয়টি কেউ আমাদের অবগত করেননি। আমরা এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর যাওয়ার খবর পেয়েছি। আজকে (বুধবার) আমরা ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলাপ করে ৬ সদস্যের একটা মেডিকেল টিম গঠন করেছি। সন্ধ্যার সময় মেডিকেল টিমটি রওনা করবে; আশা করছি আগামীকাল তারা সেখানে পৌঁছে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, আমাদের খবর পেতে খুব দেরি হয়ে গেছে। এলাকাটি খুব দুর্গম। আমরা ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম রেডি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। রোগের কারণটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেছি। তবে এটা খাবার থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে আমার ধারণা।