চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

রাঙ্গামাটিতে পিসিপি’র ২৮তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ও প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) ২৮তম কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদে নিপন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক পদে রুমেন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা নির্বাচিত হয়েছেন।

“আত্মমুখিনতা, সুবিধাবাদ ও দোদুল্যমানতা পরিহার করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র—যুব সমাজ অধিকতর সামিল হোন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল ২১ মে ২০২৪ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দিনব্যাপী প্রতিনিধি সম্মেলন ও ২৮ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, থানা, কলেজ, শহর কমিটি থেকে তিন শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। অধিবেশনে সামগ্রিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার বলেন, ছাত্র সমাজ একটি ভাসমান শ্রেণী। এ শ্রেণী সমাজের সামগ্রিক আন্দোলনে অবদান রাখতেও পারে আবার নাও রাখতে পারে। তবে আপনাদের মধ্যে অনুভূতি, অনুধাবন ও উপলব্ধির অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ, একজন বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ কীভাবে এধরণের কঠিন পরিস্থিতি চেয়ে থাকবে পারে। তার চেয়ে মরণ ভালো।

পিসিপি’র নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় থাকতে হবে, তবেই আমরা গড়ে উঠতে পারবো। আর গড়ে উঠতে পারলে পার্টির লাভ, আন্দোলনের লাভ, সমাজের লাভ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তরুণদের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত। দেশে গ্যাং কালচার বেড়ে গেছে। পাহাড়েও মাদকাসক্ত যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। অবাধে মদ বিক্রি হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী চায় যুবকেরা মাতাল হয়ে পড়ে থাকুক। আমরা মাতাল হয়ে থাকতে পারবো না। আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, লড়াই চালিয়ে নিতে হবে।

দ্বিতীয় অধিবেশনে পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা বলেন, “যেখানে শোষণ-নিপীড়ন আছে সেখানে প্রতিরোধ রয়েছে। আশির দশকে আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানে তরুণ ছাত্র সমাজই দায়িত্ব নিয়েছিল তাই আজকের প্রেক্ষাপটেও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ছাত্র সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্ম ছাত্রদের অধিকার আদায়ে, আট লক্ষ জুম্ম জনগনই আন্দোলনের শক্তির উৎস। চুক্তি শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, এর একটি আন্তর্জাতিক বৈধতা আছে। রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে তাহলে আমরা কখনো হারিয়ে যাবো না শুধু প্রয়োজন ছাত্রদের সংহতি ও ঐক্যবদ্ধ করা”।

কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২৮তম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদে নিপন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক পদে রুমেন চাকমা এবং সাংগঠনিক পদে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যাকে নির্বাচিত করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়। নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের গঠনতন্ত্র সংশোধনী প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা এবং বিদায়ী কমিটির প্রস্তাবনাবলী উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা। প্রতিনিধিদের সম্মতিক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের গঠনতন্ত্র সংশোধনী প্রস্তাবনা ও বিদায়ী কমিটির প্রস্তাবিত ১৪ দফা প্রস্তাবাবলী গৃহীত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *