দেশজুড়ে

রাজশাহীতে ৩ পুলিশ বক্সে হামলা-ভাঙচুর-আগুন

রাজশাহীতে আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে তিনটি পুলিশ বক্সসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিনটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর মহানগরীর শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিতর্কিত’ সমন্বয়ক রাফিন হাসান অর্নবকেও পিটিয়ে আহত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি মোড়ে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে যান। পথের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশের রাস্তায় মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলামকে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

পরে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুনরায় তালাইমারি মোড়ে যান।

এখানে এসে পুলিশ বক্সে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। তালাইমারি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভদ্রার দিকে এগুলোতেই নর্দার্ন মোড়ে ছাত্রলীগের একটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। ভদ্রা মোড় ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে থাকা আওয়ামী লীগের আরও দুটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন তারা।

এরপর প্রায় তিন থেকে চার সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি মহানগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে (আগের বিন্দুর মোড়) আসে। সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেন এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালান।

এ সময় পাশেই রেললাইনের ধারে অবস্থিত রেলওয়ের গার্ডরুমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর কাঠের খড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা অর্নবকে ‘বিতর্কিত’ বলে দাবি করে তাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের এক কর্মসূচিতে অর্নব বলেছিলেন যে, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে দুর্বৃত্তরা ঢুকে গেছে। ‘

অর্নব তাই ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সবাইকে চলে যাওয়ার জন্যও মাইকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এদিকে শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেওয়ায় মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেইট-নিউমার্কেট-সাহেববাজার এবং রাজশাহী-চাঁপাইনবাগঞ্জ-নওগাঁ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা এ সময় জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতি ফলকে থাকা ছবির বিকৃতি ঘটান এবং পাশের থাকা স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে (ল্যান্ডমার্ক) নানা ধরনের খারাপ মন্তব্য লেখেন। আর এ এলাকা ছেড়ে ফেরত যাওয়ার সময় আন্দোলনরতরা ভদ্রা এলাকায় থাকা আরও একটি পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম জানান, বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) লাঠিসোঁটা দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে থাকা তিনটি পুলিশ বক্স ও সরকারি দুয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *