রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান
ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার মিসর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে কেরেম শালম ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় অবরুদ্ধ গাজা এখন কার্যত বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৩৪ হাজার ৭৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত মানুষের ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।
মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গত সোমবার সন্ধ্যার পর মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই গাজার সর্বদক্ষিণের রাফার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি ট্যাংক।
ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে পালিয়ে ১০ লাখের মতো ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁবু টানিয়ে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন তাঁরা। রাফার পূর্বাঞ্চল থেকে এক লাখ ফিলিস্তিনিকে খান ইউনিসে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার এক দিন পরই অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
রাতভর ইসরায়েলের বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে রাফা। কুয়েতি হাসপাতাল জানিয়েছে যে হামলায় ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আরও ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে নাজ্জার হাসপাতাল।
পরে কেরেম শালম এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালানোর দাবি করে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড। দুই দিন আগে ওই এলাকায় হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। ওই হামলারও দায় স্বীকার করে হামাস।
রাফা থেকেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। পরে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে কেরেম শালম ক্রসিং বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কয়েক দিন আগে ক্রসিংটি চালু করা হয়েছিল।
গতকাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলি ট্যাংক রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ট্যাংকগুলোয় ইসরায়েলি পতাকা উড়ছে।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফা ও কেরেম শালম—দুই ক্রসিংয়েই জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক দপ্তরের কর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সংস্থাটির মুখপাত্র ইয়েনস লারকে এ কথা বলেন। এতে বাইরে থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লারকে বলেন, যদি জ্বালানি প্রবেশের সুযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সেটাই হবে যথেষ্ট।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশের প্রধান দুটি ধমনি (ক্রসিং) এখন বন্ধ। গাজায় মানবিক সহায়তার জোগান তাৎক্ষণিক শেষ হয়ে যায়। ফলে তাঁদের কাছে ত্রাণের মজুত খুবই কম।
এদিকে রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বড় আকারে শুরু করা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক হানান বালখি বলেন, রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান ৬ লাখ শিশুসহ ১৫ লাখ মানুষের জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে। এ অভিযান এখনই বন্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
গাজায় যুদ্ধবিরতি সমঝোতায় মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। রাফায় স্থল অভিযান শুরু করলেও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে মাঝারি পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলকে মিসরের কায়রোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা নস্যাৎ করে দিতেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফা ক্রসিংয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, রাফা ও কেরেম শালম ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই অঞ্চলকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধার্ত রাখা ও নিপীড়নের নীতি গ্রহণ করেছে ইসরায়েল।
এদিকে, রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ)। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ কথা জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে রাফায় অভিযানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।