ধর্ম

রাসুল (সা.)–এর জন্মের প্রত্যক্ষদর্শী উম্মে আয়মান বারাকা (রা.)

খাদিজা (রা.)–এর সঙ্গে বিয়ের পর রাসুল (সা.) উম্মে আয়মান বারাকাকে (রা.) তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তিনিই আমার মা, আমার পরিবারের অংশ। পরিবারটি ছিল বাবা আবদুল্লাহ, মা আমিনা আর উম্মে আয়মানকে নিয়ে। এখন বাকি আছেন শুধু উম্মে আয়মান।’ উম্মে আয়মান বারাকা ছিলেন একজন হাবশি ক্রীতদাসী। রাসুল (সা.)–এর বাবা আবদুল্লাহ আমিনাকে বিয়ে করার আগে তাঁকে বাজার থেকে কিনে আনেন। তিনি দরদ দিয়ে আবদুল্লাহ ও আমিনার সেবাযত্ন করেন।

মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রসবকালে উম্মে আয়মান বারাকা ছিলেন আমিনার পাশে। জন্মের পর মুহাম্মদকে জড়িয়ে ধরে তিনি আমিনার পাশে শুইয়ে দেন। তিনিই ছিলেন মহানবীর সেবিকা ও ধাত্রী। ইসলামের প্রথম পর্বে যেসব নারী–পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের একজন।

একদিন রাসুল (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে জান্নাতকে বিয়ে করবে?’ রাসুল (সা.) কথাটি তিনবার জিজ্ঞেস করেন, তিনবারই যায়িদ ইবনে হারিসা (রা.) জবাব দেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি করব।’ উম্মে আয়মান (রা.)–কে বিয়ে করে যায়িদ (রা.) সেদিন যেন জান্নাত ঘরে তুলেছিলেন। তাঁদের ঘরে উসামা ইবনে যায়িদ জন্ম নেয়। উসামা (রা.) উচ্চ মর্যাদার সাহাবি ছিলেন।

যেসব মুসলিম মক্কা ও হাবশা দুই জায়গায় হিজরত করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, উম্মে আয়মান বারাকা (রা.) তাঁদের একজন। তিনি ওহুদ ও খায়বার যুদ্ধে অংশ নেন। ওহুদ যুদ্ধে তিনি সৈনিকদের পানি পান করান এবং আহত সাহাবিদের সেবা দেন।

রাসুল (সা.) উম্মে আয়মানকে (রা.) অনেক ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। কয়েক দিন পরপরই তাঁকে দেখতে তাঁর বাড়িতে যেতেন। রাসুল (সা.)–এর ইন্তেকালের পর উম্মে আয়মান (রা.) অঝোরে কাঁদতে থাকেন। আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর জন্য আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার মজুত রয়েছে।’ উম্মে আয়মান (রা.) বলেন, ‘সে কথা জানি। কিন্তু আমি কাঁদছি এ কারণে যে আজ থেকে ওহি নাজিলের ধারা বন্ধ হয়ে গেল।’ জবাবটি শুনে আবু বকর ও উমর (রা.)–ও কাঁদতে থাকেন। (মুসলিম)

উম্মে আয়মান বারাকা (রা.) পাঁচটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। খলিফা উসমান (রা.)–এর খিলাফতের সময় উম্মে আয়মান (রা.) ইন্তেকাল করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *