দেশজুড়ে

রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে পদ্মার চরে শ্রমিক সংকট

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে আতঙ্কের নতুন নাম রাসেলস ভাইপার। এ সাপের ভয়ে বাদাম তোলার জন্য কোনো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে জমির মালিকরাই বাদাম তুলছেন।

বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের চরাঞ্চলের বেলে মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

সম্প্রতি চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেশি হওয়ায় ভয়ে অনেকেই ক্ষেতে যাচ্ছেন না। বাদাম তুলতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে জমির মালিকরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ছেন।

বাদামচাষি ছালাম শেখ বলেন, রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত দুই মাসে সাপের কামড়ে মারা গেছে তিনজন। এ কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে কেউ ক্ষেতে নামতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে নিজেদেরই বাদাম তুলতে হচ্ছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে বাদাম তুলতে এসেছেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, “সাপের ভয়ে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অনেককে বলেছি, কিন্তু কেউ রাজি হয়নি। এ কারণে পরিবারের সবাই মিলে বাদাম তুলছি। কী করব, বাদামই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তাও এবার ফলন ভালো না হওয়ায় মন খারাপ। তবে দাম যদি একটু বেশি পাই তাহলে লোকসান হবে না। বাদাম থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সারা বছর সংসার চলে।”

করিমন বেগম বলেন, “আমি মানুষের বাড়িতে গিয়ে কাজ করি। বাদাম তোলার সময় প্রতি বছরই এ কাজ করি; বেতন ভালো পাই। এ বছরও বাদাম তুলতে আইছি, কিন্তু ভয় লাগে সাপের।”

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, “দাবদাহের কারণে বাদাম এবং তিলের ফলন ভালো হয়নি। পাশাপাশি পদ্মার পানি বাড়ায় তীববর্তী এলাকার বাদাম ক্ষেতে পানি ঢুকেছে। তাড়াহুড়ো করেই বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে চাষিদের। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা, রাসেল ভাইপারের কারণেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন সাপের কামড়ে মারা যাওয়ায় অনেকে ভয়ে ক্ষেতে যেতে চাচ্ছে না।”

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে যাতে বাদাম না তোলে। রোদের মধ্যে বাদাম তুললে কালারটা ভালো থাকবে। এ ছাড়া রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচতে কৃষকদের ক্ষেতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়া সাপের চোখে গেলে সেখান থেকে দ্রুত তারা সরে যায়। কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলও হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *