অর্থনীতিকক্সবাজার

রোহিঙ্গাদের জন্য কমছে আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এলাকার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ই-ভাউচার শপ। সেখান থেকে নেয়া যায়, রোহিঙ্গাদের জন্য মাসে বরাদ্ধকৃত রেশন। ই-ভাউচার শপে পরিবারের জন্য সম্প্রতি বরাদ্ধ রেশন নিতে আসেন ক্যাম্পের বাসিন্দা সরদার আলী। নিয়ম অনুযায়ী তিনিসহ প্রতি রোহিঙ্গার জন্য মাসে বরাদ্দ ১০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১শ’ টাকার মতো।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সেক্ষেত্রে পার মিলে বাংলাদেশি টাকায় দাম পড়ে মাত্র ১২ টাকা। এই টাকা দিয়ে তো একটা ডিমও পাওয়া যায় না। তাহলে একটা মিল কীভাবে হয়?

ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা জয়তুন খাতুন। স্বামীহারা জয়তুনে সংসার ৫ জনের। জানালেন, রেশনে কোনোরকম ২০ দিন যায় তাদের। মাসের বাকি ১০ দিন কাটে, ধার দেনা বা না খেয়ে।

এই ক্যাম্পের অনেক পরিবারের অবস্থাই এমন। রেশনের টাকা ফুরালেও ফুরায় না মাস। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কমছে। তারা পর্যাপ্ত সাহায্য না পাওয়ায় হতাশ। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি জনগোষ্ঠীর ভরণ-পোষণে হিমশিম খাওয়ার কথা জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ সহায়তা না মিললে বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

ইতালির রোমের ইউএন এজেন্সিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেফরি প্রিস্কট সম্প্রতি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরও তিন কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন তখন।

জেফরি প্রিস্কট বলেছেন, এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমি এখানে আসার একটি কারণ হলো, এই চলমান সঙ্কটে কিছু উদাহরণ তুলে ধরতে। আমরা অন্যান্য দাতাদেরকে আগের থেকে আরও বেশি উৎসাহিত করছি। এই প্রচেষ্টায় এনজিও, ব্যক্তিগত খাত, অন্যান্য সরকারগুলোর আমাদের সাথে যোগ দেয়া দরকার।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কার্যক্রমের বাংলাদেশ প্রধান ডমেনিকো স্কালপেলি বলেছেন, বেশ আর্থিক চাপ যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহযোগিতা বাড়ানো দরকার এখনই।

তিনি আরও বলেন, কমপক্ষে রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজন ও জীবনব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে হবে। যাতে তারা অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভর না হয়।

২০১৭ সালে থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তাদের জন্য চাহিদার সর্বোচ্চ ৭৫ ভাগ সহায়তা এসেছিল ২০১৯ সালে। আর সবচেয়ে কম আসে ২০২০ সালে, যা চাহিদার মাত্র ৫০ ভাগ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরও বলেন, অনেকেই ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা খাদ্য বা কাজের সন্ধানে। যা আমাদের স্থানীয় জনগণের ওপর ঋণাত্বক প্রভাব তৈরি করেছে। আর সেটি মোকাবেলা করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *