জাতীয়

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: লিউ জিয়ানচাও

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই সংকট সমাধানে তারা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও (Liu Jianchao)।

সোমবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান তিনি।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান বিষয়টি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি জটিল। এমনকি মিয়ানমার সরকারও কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারবে সে রকম অবস্থা তাদের নেই। তাদের যে গৃহযুদ্ধ, সংঘাতময় পরিস্থিতি এটি (রোহিঙ্গা সংকট) জটিল করে ফেলেছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এ নেতা বলেন, চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা কাজ করছে কীভাবে এই পরিস্থিতি (রোহিঙ্গা সংকট) সমাধান করা যায়। বাংলাদেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা সেটি অনুধাবন করে।

জাতিগত নিধনের শিকার জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় এবং অব্যাহতভাবে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন লিউ জিয়ানচাও।

দীর্ঘদিনেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৬ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। এই (সমাধান) অনিশ্চয়তার জন্য আমরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা এবং চীনের প্রেসিডেন্টের আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।

লিও জিয়ানচাও-কে প্রধানমন্ত্রী তার এই বিশেষ বার্তা চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ আমরা জাতির পিতা প্রবর্তিত এই প্রবর্তিত পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর প্রশংসা করে লিউ জিয়ানচাও বলেন, হাজার বন্ধু, একজনও শত্রু নয় (থাউজেন্ড ফ্রেন্ডস, জিরো এনিমি)।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ নেতা বলেন, চীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তারা কখনও কোনো যুদ্ধে জড়াইতে চায়নি। তাদের ওপর (যুদ্ধ) চাপানো হয়েছে, কোরিয়ান যুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ।

তিনি বলেন, চীন কোনো যুদ্ধে না জড়ানোয় চীনসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো উন্নতি করতে পেরেছে।

চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোর জন্য এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন এই মন্ত্রী।

চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করতে চায় জানিয়ে লিউ জিয়ানচাও বলেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে চায়। পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ব্যাপক ও গভীর করার কথা তারা ভাবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বও প্রত্যাশা করেন তিনি।

আগামী জুলাইয়ের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফরের কথা উল্লেখ করে লিউ জিয়ানচাও বলেন, এই সফর আমাদের অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসা করেন তিনি।

চীনের মন্ত্রী বলেন, তার দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে লিউ জিয়ানচাও বলেন, চীনের অর্থনীতির গতিও মন্থর করে দিয়েছে।

উন্নয়নের এক পর্যায়ে চীনও অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করেছিল বিষয়টি উল্লেখ করে চীনের মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের একটা পর্যায়ে চীনও অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করেছে। আমাদের কিছুটা ভুগতেও হয়েছে। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা কঠিন ছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তখন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ততটা উন্নত ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ স্মার্ট প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।

বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার দলের রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য উন্নয়ন এবং দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জীবন মান উন্নত করা।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতার ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে লিউ জিয়ানচাও।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের এই মন্ত্রী অর্থনীতি, বিনিয়োগ এবং দলের সঙ্গে দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার দল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সাক্ষাৎকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *