র্যাব পরিচয়ে ১৯ লাখ টাকা লুট করে র্যাবের হাতেই ধরা
গাজীপুরের শ্রীপুরে র্যাব পরিচয়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের ১৯ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ডাকাত চক্রের মূলহোতা হামিম ইসলামসহ (৪৫) পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- জিন্নাহ মিয়া (২৭), আমিন হোসেন (৩০), রুবেল ইসলাম (৩৩) ও আশিকুর রহমান (৪২)।
বুধবার (১২ জুন) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর রামপুরা, উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, র্যাব জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং ছিনতাইকৃত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গত ০৬ জুন বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার ৩ নম্বর গেটের সামনে ভুয়া র্যাব পরিচয়ে কারখানার ৩ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ট্রাক ভাড়ার ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় ডাকাতচক্রের মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩ কর্মকর্তা ব্যাংক থেকে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তুলে প্রাইভেটকারে কারখানায় যাচ্ছিলেন। প্রাইভেটকারটি কারখানার ৩ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছালে গ্রেপ্তাররা একটি টয়োটা এক্স নোয়া গাড়ি নিয়ে প্রাইভেটকারটির গতিরোধ করে। এসময় তারা র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় নিজেদের ভুয়া র্যাব পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে কর্মকর্তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর মারধর করে গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা রেখে কারখানার কর্মকর্তাদের ঢাকা-ময়মনসিংহ সহাসড়কের গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হামিম এই চক্রের প্রধান। এই চক্রে ১০/১২ জন সদস্য রয়েছে। তারা ডাকাতির কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো। প্রায় ৩-৪ বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় দিয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর নিকটবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল।
গ্রেপ্তাররা ডাকাতির কৌশল হিসেব বিভিন্ন সময় নিজেদেরকে র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় দিতো এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করতো।
তাদের কিছু সদস্য বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভুয়া পরিচয়ে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণ করতো। পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাইরে থাকা চক্রের অন্য সদস্যদের অবগত করতো।
এসময় বাইরে থাকা চক্রের সদস্যরা তাদের ব্যবহৃত গাড়ি দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেটকৃত ব্যক্তির গাড়ির গতিরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জ্যাকেট পরে ভুয়া সদস্য পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে মারধর করে তার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ রেখে তাকে নির্জন স্থানে তাকে ফেলে চলে যেতো। চক্রটি প্রতি মাসে ২-৩টি ডাকাতি করতো এবং ডাকাতির টাকা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হামিম ৩-৪ বছর আগে ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে সে ডাকাতিে জন্য ১০/১২ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে। সে ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল।
রুবেল এই চক্রের মূলহোতা হামিমের প্রধান সহযোগী। সে ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সময় নিজেকে সাংবাদিক ও মাঝে মাঝে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতো। জিন্নাহ এবং আমিন এই ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকতির সময় টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে উঠাতো।
গ্রেপ্তার আশিক এই চক্রের নবীন সদস্য। সে ডাকাতির আগে টার্গেটকৃত স্থানে গাড়ি চালিয়ে রেকি করতো এবং ডাকাতি পর সম্ভাব্য কোন কোন রাস্তা দিয়ে পালানো সুবিধাজনক হবে তা নির্ধারণ করে হামিমকে জানাতো।