লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস
দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আহরণকারী শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করেছে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। যা এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৬১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, ২০২২-২৩ এর চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। যার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি। যদিও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। অথচ আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঘাটতি রয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ অর্থবছরের কোনবারেই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে।
যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে ডলার সংকটের কারণে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারেননি। ফলে পণ্য আমদানি আশানুরূপ হয়নি। তাছাড়া যেসব পণ্য উচ্চ শুল্কযুক্ত সেসব পণ্য আমদানিতেও নিরুৎসাহী করা হয়েছিল। ফলে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। তবে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে তা যথেষ্ট। গত অর্থবছরের তুলনায় ১২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি মোটেই কম নয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনার ফাইজুর রহমান বলেন, মিথ্যা ঘোষণার জন্য দ্বিগুণের বেশি জরিমানা আদায়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণসহ অনিয়ম প্রতিরোধে নজরদারি বাড়ানোর কারণে রাজস্ব বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ২০২০ সালের জুনে এনবিআর মিথ্যা ঘোষণার জন্য ন্যূনতম জরিমানা নির্ধারণ করে, যা ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের দ্বিগুণ। আগে ন্যূনতম জরিমানা নির্ধারণ না থাকায় রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা বেশি ছিল। মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব ফাঁকি কমেছে।
হাইস্পিড ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, আপেল, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাম অয়েল, ভাঙা পাথর ও পেট্রোলিয়াম তেলসহ আমদানি করা ১২ পণ্য থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। অর্থাৎ, মিথ্যা ঘোষণা প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিত করায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৪৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া আগস্ট মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৭১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৬৬১ কোটি ১১ লাখ টাকা।
নভেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ১০৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। জানুয়ারির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৯১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ফেব্রæয়ারির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, আদায় হয় ৪ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। মার্চের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৯১ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৬৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এছাড়া এপ্রিল মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ হাজার ৭১ কোটি টাকা, আদায় হয় ৫ হাজার ৯৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মে মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা, আদায় হয় ৬ হাজার ৫০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সর্বশেষ জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৭৩৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।