অন্যান্য

লাখ টাকার গরুর চামড়াও ৪০০ টাকা!

আসন্ন কোরবানি গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে ট্যানারিতে প্রায় ২০ বর্গফুটের একটি গরুর চামড়ার দাম পড়বে ১ হাজার টাকা। কিন্তু ট্যানারি থেকে নির্ধারিত দাম না পাওয়ায় কোরবানিদাতাদের লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করতে হবে চারশ থেকে সাড়ে চারশ টাকায়। তাই ট্যানারিগুলো নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে কিনা— তা তাদারকির দাবি জানিয়েছেন চামড়া আড়তদাররা।

সোমবার (৩ জুন) সচিবালয়ে আয়োজিত আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বৈঠকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর উপস্থিতিতে চামড়ার নতুন এই মূল্য ঘোষণা করা হয়। এবার ঢাকার মধ্যে কোরবানি গরুর চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দর নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবদুল কাদের বলেন, ‘চামড়া আড়তদাররা সরকারের নির্ধারিত দর পায় না। চামড়া প্রতি সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা কম পায়। অথচ তারা শুধু চামড়া কেনাবেচার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারে না। তাদের চামড়াগুলো সঠিক সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করে লবণ দিতে হয়। এখানে পরিবহন, গুদাম ভাড়া ও লবণের খরচ যোগ করতে হয়। এরপরও তারা যদি সরকার নির্ধারিত দর না পায়, তাহলে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না। এজন্যই তো ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে ভালো মানের চামড়ার জিনিস আমরা বাজারে পাই না।’

দিনে দিনে আড়ত-ট্যানারি কমছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায় সরকারের সহযোগিতা আমরা পাইনা। চট্টগ্রামে একসময় ১১২ জন সমিতির সদস্য ছিলো। এছাড়া মৌসুমী আড়তদার ছিলো প্রায় দেড়শতের মতো। সব মিলে নগরের ছোট-বড় ২২৫টি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ হতো। আর এখন ৩০ থেকে ৪০টা আড়ত আছে। আড়তদার আছে ৩২ জন। ট্যানারিও কমে গেছে। আগে চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিলো। আর এখন শুধু রিফ ল্যাদার নামের একটি ট্যানারি আছে।’

সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ২০ বর্গফুটের গরুর চামড়ার দর যেখানে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে আমরা প্রতিবছরের মতো হিসাব করলে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পাবো। চট্টগ্রামে রিফ ল্যাদার আমাদের থেকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার চামড়া কিনে। কিন্তু চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চামড়া পাওয়া যায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ। বাকি চামড়াগুলো আমরা ঢাকার ট্যানারিগুলোর কাছে নিয়ে যাই। তারা আমাদের সরকার নির্ধারিত দর দেয় না। এরমধ্যে আমরা যে চামড়া নিয়ে যাই তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাদ দিয়ে দেয়। অথচ সেখানে চামড়া নেওয়ার জন্য আমাদের অতিরিক্ত পরিবহন ও আড়ত ভাড়ার প্রয়োজন হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে তারা আমাদের হয়তো ৫০ শতাংশ টাকা নগদে দিয়ে দেবে। বাকি টাকা দুই মাস পরে দিবে বলে। কিন্তু সেই টাকা আদায় করতে আমাদের পুরো বছর লেগে যায়। এ বিষয়গুলো যদি সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু আন্তরিকভাবে দেখতো, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না। তখন আমরাও সরকার নির্ধারিত দরের ৫ থেকে ৬ টাকা কম দিয়ে মাঠ পর্যায়ে চামড়া কিনতে পারতাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *