ধর্ম

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর ছিল আরাফাত ময়দান

সৌদিআরবের ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হলো এবারের পবিত্র হজ। ধবধবে সাদা ইহরাম কাপড় পরিহিত ২০ লাখের ও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জোহর ও আসরেরর নামাজ এক আজানে ২ ইকামতে আদায় করেন।

এ বছর বাংলাদেশসহ সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী ১৮০টি দেশ হজে অংশ নেয়। আর আজকের এ দিনটিকে বলা হয় আরাফাত দিবস। পবিত্র অনুভব আর ঐশি আবেগে উদ্ভাসিত লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে আরাফাতের সকল প্রান্তর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। জাবালে রহমতে কেবল মানুষ আর মানুষ। ইসলামের ইতিহাসে হজ পালনে শুভ্র বসনে, অভিন্ন অবস্থানে অগণিত নারী পুরুষের কন্ঠে উচ্চারিত হয় সেই ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকালাক।’

শনিবার মুসলিম জাতির দৃষ্টি ছিল আরাফাতের ময়দানে, কোটি হৃদয়ের স্পন্দন ছিল জাবালে রহমতকে ঘিরে, দেশ দেশান্তরের লাখো মুসল্লি যেন শত কোটি মুমিনের প্রতিনিধি হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দেয়ার দৃপ্ত শপথ।

শনিবার সৌদি স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২ টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে) আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে হজে অংশগ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে হজের খুতবা দেন পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্কল আল মুয়াইকিলি।

খুতবার শুরুতে তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, রাসুলুল্লাহ (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে বাংলাসহ ৫০টি ভাষায় অনুবাদ ও সম্প্রচার করা হয়।

ড. মাহের আল মুয়াইকিলি হজের খুতবায় মানবজীবনে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, সামাজিক জীবনে করণীয় উল্লেখ করেন। তিনি সুভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান। গীবত ও খারাপ কথা থেকে বিরত থাকায় ইসলামের নির্দেশকে মনে করিয়ে দেন।

হাজিদের উদ্দেশে ড. মাহের বলেন, আপনারা সম্মানিত। আপনারা যেন নিরাপত্তার সঙ্গে হজ পালন করতে পারেন, সেজন্য কিছু নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আপনারা সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি স্থানে অবস্থান করেছেন যেখানে অর্থাৎ এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। হজরত বেলাল (রা.)-কে আজানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রদত্ত খুতবার পরপরই সৌদি স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৪৫ মিনিটে জোহরের সময় একই সাথে জোহর ও আসরের কসর সালাতে ইমামতি করেন তিনি। এটাই হচ্ছে হজের নিয়ম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখো লাখো হাজির সময় কাটে দোয়া, মোনাজাত, আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে। সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা।

১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। ১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি (অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন), মাথা ন্যাড়া করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত।

মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করবেন ও প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরীফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

এবার বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খাঁন হজ পালন করেন। এদিকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট ২০ জুন শুরু হয়ে চলবে আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *