লুটপাট-ভাঙচুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন ও পদত্যাগের দিন (৫ আগস্ট) বিকেলে গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি জানিয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের জন্য পার্কটি বন্ধ রাখা রয়েছে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ফটকটির উপরে ঢালাই করে লেখা বঙ্গবন্ধু নামের অংশটি ভেঙে ফেলা হয়। প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকেই সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটিও খোদাই করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। পরে গ্যারেজে পার্কিং করা একটি পর্যটক বহনকারী একটি বাস, দুইটি জিপ ও ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। ডিসপ্লে ম্যাপটিও ভাঙচুর করে। এছাড়া পার্ক অফিসের জানালার কাচ, ফ্যান ও কম্পিউটার, প্রিন্টার, পিসি, স্ট্যান্ডফ্যান, ওয়ালফ্যান, সিলিংফ্যান ভেঙে ফেলে। লুট করেছে সেখানে থাকা ল্যাপটপটিও। ডরমিটরি ভবন, রেস্টহাউস ময়ুরী ও ঐরাবতী, ফুডকোর্ট-১ ও ২, শিশুপার্ক, মিউজিয়াম, প্রজাপতি কেন্দ্র, পার্ক অডিটোরিয়াম, কৃত্রিম উপায়ে পাখির ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট করে হামলাকারীরা। ফুডকোর্টে থাকা বিভিন্ন কোমলপানীয়, বোতলজাত পানি, চিপস, বিস্কুট, আইসক্রিম লুট এবং ফ্রিজ, গ্লাসসহ বিভিন্ন মালামাল তছনছ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের জানালা-দরজার কাচ ভাঙচুর এবং সাউন্ড সিস্টেম লুট করা হয়েছে।
পার্ক কর্মকর্তারা জানান, দুর্বৃত্তরা মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা মৃত পশু,পাখি, মাছের মূল্যবান নমুনা রাখা জার ভাঙচুর করেছে, মিউজিয়ামের জানালার দরজার কাচ ভাঙচুর করেছে। প্রজাপতি কর্নারে লাইফ সাইকেল, ঘরের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি পার্কের ইনকিউবেটর রুমের ইনকিউবেটর, এসি, ফ্রিজ ভাঙচুর করেছে। ইনকিউবেটর রুমে থাকা ২টি ময়ূর ছানা ও পাখিশালা থেকে বিভিন্ন জাতের ৮টি টিয়া পাখি নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া দুর্বৃত্তরা অজগর সাপের বেষ্টনী ভেঙে দিলে তিনটি অজগর সাপের মধ্যে ২টি সাপ বাইরে চলে গেছে। কোর সাফারি পার্কে পর্যটক পরিবহনের জন্য একটি পর্যটক বাস, ২টি সাফারি জিপ গাড়ি ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। পার্কের দুটি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর ও মালামাল লুট এবং সব সাইনবোর্ড ও ব্যানার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা সিটি টিভি ক্যামেরা, মনিটর, টিভি, ল্যাপটপ লুট করে। এসব ভাঙচুরের পর হামলাকারীরা কোর সাফারি পার্কে (বাঘ-ভালুক-সিংহ বেষ্টনী) হামলা চালাতে যায়। কিন্তু এসময় পার্কে হিংস্র ওইসব প্রাণী মুক্তভাবে বিচরণ করতে থাকায় তারা সেখান থেকে ফিরে যায়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, হামলাকারীরা পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলা-ভাঙচুরের ফলে পার্কে আড়াই কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্বৃত্তের হামলার পর থেকে পার্কটি পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে। এসব মেরামতের পর পর্যটকদের জন্য পার্ক খুলে দেওয়া হবে। দেশে সরকার পতন আন্দোলনে থানার কার্যক্রমও অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কে ৮টি বাঘ, ৪টি সিংহ, ১৫০টি হরিণ, গয়াল ১১টি, মায়া হরিণ ৬টি, জেব্রা-৩০টি, জিরাফ-২টি, ওয়াইল্ড বিস্ট-১২টি, সাম্বার হরিণ-৬টি, নীলগাই-৯টি, ভালুক-১৪টি, টিয়া পাখি- দুই শতাধিক, উটপাখি-১১টি, মদন টাক-৮টি, গরিয়াল-৫টি, ম্যাকাউ পাখি-৩০টি, ইমু পাখি-৯টি, কুমির-১১টি, লেমুর-৩টি, জলহস্তি-৪টি, শকুন-১৭টি, ময়ূর পাখি শতাধিক আরো দেশি-বিদেশি শতাধিক বিভিন্ন পশুপাখি রয়েছে। এখন পার্ক বন্ধ থাকায় কোন আয় না থাকলেও পশু-পাখির জন্য খাবারের খরচ আসে রাজস্ব বরাদ্দ থেকে। প্রতিদিন এদের খাবারের জন্য লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পার্কে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হতো।