চট্টগ্রামফটিকছড়ি

লোমহর্ষক বর্ণনা দিলো পরিবার, ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় খুনের নির্মমতা

প্রাণে বাঁচতে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন নিহত জাহাঙ্গীর ও আলমগীরসহ চার ভাই। দুষ্কৃতিকারীরা ঘরের চারদিকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল মারতে থাকে। একপর্যায়ে ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরে আগুন দিয়ে ঘরের ভেতরে থাকা চার ভাইকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা।

তাদের ছোড়া আগুনে ঘরের সামনের রুমের একাংশে আগুন লেগে যায়। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ এক পরিস্থিতি। শেষতক নিহত জাহাঙ্গীর আর আলমগীর ঘর থেকে বের হলেন, তাদের ধারণা ছিল দুষ্কৃতিকারীরা অন্তত প্রাণে মারবে না। এমন বিশ্বাসে দুই ভাই অপরাধীদের নিভৃত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু ঘরের সামনে শুরু হলো ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নির্মমভাবে দুই সহোদরকে হত্যা করা হয়। কেঁদে কেঁদে ঘটনাগুলো বর্ণনা করছিলেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া তাদের আরেক ভাই প্রবাসী মুহাম্মদ রাসেল। এ ঘটনায় ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের নানা নির্মমতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ঘরের ভেতরে ও সামনে রয়েছে নানান ক্ষতের চিহ্ন। তাদের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা লাঠির উপর ভর করে বাড়ির এক কোনায় দুই হারানো ‘ধন’র জন্য বিলাপ করছিলেন। বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলেদের আবার ফিরিয়ে দাও আল্লাহ, আবার ফিরিয়ে দাও।’

বাবার খাটিয়ার সামনে নিহত জাহাঙ্গীরের ৮ বছরের ছেলে জিপাস ও ৫ বছরের মেয়ে তারিন কাঁধছিল। বাড়ির আঙিনায় পাশাপাশি দুটি লাশের সামনে স্বজনদের আহাজারিতে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গতকাল বিকেলে নিহত দুই ভাইকে ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে আনা হয়। মাগরিবের আগে স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে তাদের।

এদিকে, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। জাফতনগর ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জিয়া উদ্দিন জিয়া জানান, খুবই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আছি। এমন ঘটনা কখনও কল্পনা করিনি। এই এলাকার মানুষ একসাথে দু’জনের নামাজে জানাজা আগে কখনও পড়েনি। দোষী যেই হোক, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফটিকছড়ির জাফতনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ছমদ বাড়িতে মৃত নুরুল ইসলামের দুই ছেলে নুরুল আলম প্রকাশ জাহাঙ্গীর ও মুহাম্মদ আলমগীরকে তাদের ঘরের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *