দেশজুড়ে

শাহজালাল বিমানবন্দরে মশা তাড়াতে ধূপ!

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন আকাশপথে অসংখ্য যাত্রী দেশত্যাগ করেন ও দেশে ফিরে আসেন। এসব যাত্রীদের মধ্যে থাকে বিদেশি যাত্রীও।

অথচ দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মশা তাড়াতে ধূপের আগুন জ্বালানোর মতো সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীতে মশার উৎপাত নতুন কিছু নয়। এর হাত থেকে রেহাই পান না বিমানবন্দরের যাত্রী ও দায়িত্বরতরাও। মশার কামড়ে অতিষ্ট হতে হয় প্রিয়জনকে বিমানবন্দরে বিদায় দিতে ও নিতে আসা সাধারণ মানুষকে। তবে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধূপের আগুন জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর পদ্ধতিকে দৃষ্টিকটুভাবে দেখছেন সচেতন নাগরিকরা। প্রশ্ন উঠছে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা নিয়েও।

তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই সনাতন পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছে। তাদের দাবি, যাত্রীদের স্বস্তি দিতে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক উপায়েও পুরোপুরি মশা তাড়াতে না পারায় সেসব উপায়ের পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যায় ধূপের আগুন ও ধোঁয়া জ্বালানোর মতো সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ধূপের আগুন জ্বালানোর একটি ভিডিও ও ছবি শনিবার (১ জুন) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন শরীফুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনের এক নম্বর টার্মিনালের সামনে মশার কয়েল রাখার একটি পাত্রে আগুন জ্বলছে। সেটি দেখে বিস্মিত হচ্ছে শিশুসহ অন্যান্য যাত্রীরা।

ওই পোস্টে শরীফুল হাসান লেখেন, আজ ভোরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেট দিয়ে বেরোতেই দেখি এই আগুন জ্বলছে। বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এভাবে আগুন এবং ধোঁয়া দেখে বিস্মিত হলাম। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা আনসার সদস্যদের জিজ্ঞেস করলাম, ভাই ঘটনা কী? জানালেন, অনেক মশা তাড়াতে এই ব্যবস্থা। উত্তর শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। মশা তাড়াতে ধূপে আগুনের গ্রামের এই সমাধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে? আচ্ছা উদ্যোগটা কার? এটা কি দেশে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়? ভিডিওতে দেখবেন বিদেশ থেকে আসা এক শিশু বিস্মিত হয়ে এই আগুন দেখাচ্ছে। আমার ধারণা সারা দুনিয়া বিস্মিত হবে।

তিনি আরো লেখেন, আমি শুধু ভাবছি অবস্থা কতটা বেগতিক হলে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়? কিন্তু তাই বলে আগুন? হ্যাঁ, মশা তাড়ানোটা অবশ্যই জরুরি, তবে বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এভাবে আগুন এবং ধোঁয়া দিয়ে মশা তাড়ানো কতটা নিরাপদ? আর এই আগুন দেখে এতগুলা সংস্থা কীভাবে চোখ বুজে থাকলো? কাদের এই কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে? কারা এগুলো দিয়ে যায়? আচ্ছা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কী হবে? আসলে বোধ হয় বাংলাদেশে সব সম্ভব!

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিকিউরিটি ম্যানেজার রাসেল বলেন, বিমানবন্দর একটি ঝলমলে এলাকা। এখানে প্রচুর যাত্রী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন আসে। আমরা যারা কাজ করি তারাও আসি। বিমানবন্দরের ভেতরে পরিষ্কার রাখলেও বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মশা আসতে পারে। এটি রোধ করার জন্য আমরা প্রতিদিন ভোর ও সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের প্রতিটি প্রবেশ পথের পাশে ধূপ জ্বালাই। যাতে বাইরের মশাগুলো ভেতরে আসতে না পারে এবং বিমানবন্দরে যারা আসেন তাদের ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের অসুবিধা না হয়। ধূপ তো প্রথমে আগুন জ্বালিয়েই ধোঁয়া সৃষ্টি করতে হয়। এখন যিনি ছবি তুলেছেন তিনি হয়তো বিস্তারিত জানেন না।

কিন্তু এমন সনাতন পদ্ধতিতে মশা তাড়ানো দৃষ্টিকটু কিনা বা এতে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মশা তাড়াতে আমরা কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছি না। সনাতন, আধুনিক, বৈজ্ঞানিক, প্রাকৃতিক সব ধরনের পদ্ধতি আমরা ব্যবহার করছি। এটা আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ ও সিটি করপোরেশনের পরামর্শেই করেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য যেকোন উপায়েই হোক মশা নিয়ন্ত্রণ। যে পদ্ধতিতেই হোক। তারপরও যাতে ধূপের আগুন থেকে কোনো অগ্নিকাণ্ড না ঘটে সেটি মনিটরিং করার জন্য একটি সমন্বয় টিম রয়েছে। ওনারা সব সময় এই কাজের জন্য সজাগ থাকেন। এছাড়া আমাদের বিমানবন্দরে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা রয়েছে।

বিমানবন্দরে মশা তাড়াতে ধূপ জ্বালানোর পাশাপাশি আরও অনেক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিমানবন্দরে মশা নিয়ন্ত্রণে সিডিসি সার্ভে (সেন্টার ফর ডিজিস সার্ভে) করে থাকি। প্রতিনিয়ত আমরা এমন জরিপ করে থাকি। প্রথমে আমরা বেশকিছু মশার লার্ভা পেয়েছি। ওই আনুযায়ী আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বিমানবন্দরের কোনো জলাশয়ে এখন কোনো লার্ভা নেই। তারপরও আমারা আমাদের খাল ও পুকুরগুলোকে নিয়মিত পরিষ্কার করি। আমরা মশার লার্ভা নিধনে কিছু গাপ্পি মাছও ছেড়েছি। যাতে কিছু থাকলেও সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে শেষ হয়ে যায়। এছাড়া আমরা বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য মশার ফাঁদ রেখেছি। বিভিন্ন উপকারী গাছও লাগানো হয়েছে। সকালে-বিকালে লার্ভিসাইড স্প্রে করি। নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ করা হয়। প্রতিদিন সেসব মনিটরিং করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *