জাতীয়রাজনীতি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক আন্দোলনে সতর্ক দৃষ্টি আওয়ামী লীগের

শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তবে এই আন্দোলন যাতে রাজনৈতিক ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে না পারে সে জন্য বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকর।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠেছে এবং এই আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে এমন ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোাটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়। এই কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের পর আন্দোলনকারীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

এদিকে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বসার কথা ছিলো। কিন্তু ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বৈঠকটি হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের এই আন্দোলন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আরও তীব্র করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীতে আরও কর্মসূচি আসতে পারে। তবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের এই আন্দোলন যাতে অন্য দিকে প্রবাহিত না হয় বা সরকারর বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও এ সব আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছেন ও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের এ আন্দোলন পেশাজীবী আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখানে যে সব দাবি রয়েছে সেগুলো পেশা সংশ্লিষ্ট। এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। শিক্ষার্থীরা যে কোটা বাতিলের দাবি করছে সেটা এখন আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করছে। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে। কিন্তু উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। রাষ্ট্র পক্ষ আবেদন করেছে আদালত কি রায় দেন সে পর্যন্ত সরকারকে অপেক্ষা করতে হবে।

আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা জানান, তবে এটা অরাজনৈতিক আন্দোলন হলেও সরকার ও আওয়ামী লীগ বিষয়টির উপর দৃষ্টি রাখছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে কোনো আন্দোলনেরই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি অন্য দিকে ঘুরিয়ে সেটাকে রাজনৈতিক বা সরকারবিরোধী রূপ দেওয়ার চেষ্টাও থাকতে পারে। তবে এই আন্দোলন অত দূর গড়ানোর সম্ভাবনা নেই। শিক্ষাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ আছে। আদালতের রায়ের পর ছাত্র আন্দোলনও থেমে যাবে। কারণ আদালতের রায়ই চূড়ান্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, যেখানে আদালতের রায় রয়েছে সেখানে সরকারের তো কিছু করার নেই। শিক্ষকদের যে আন্দোলন সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ আছে। আমি মনে করি আলোচনার মাধ্যমে এ সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ আন্দোলন তো কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, পেশা সংশ্লিষ্ট আন্দোলন। বসলে সমাধান বেরিয়ে আসবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সরকার তো কোটা বাতিল করেছিলো। এখন আদালতের রায় তো সবারই মানতে হবে। তারপরও আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি আসে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তারপর আলোচনাও করা যেতে পারে। শিক্ষকদের বিষয়টিও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যাবে। সবই সমাধান হয়ে যাবে আমি মনে করি। এগুলো নিয়ে উদ্বেলিত, উচ্ছ্বসিত, তীর্জক ভাষায় কথা বলার কিছু নেই। একটি শ্রেণী ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা সব সময়ই করে। তবে এই সব আন্দোলন নিয়ে সেই সুযোগ পাবে না, এ ব্যাপারে সরকার, আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *