শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগ ছয় মাস স্থগিত
এবার চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে আসা বিদেশি জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের অপারেটর তালিকাভুক্তির টেন্ডার ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। গত বুধবার হাইকোর্টর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক এর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের রেগুলেশন ও আইন পরিবর্তন করে এই কাজে অভিজ্ঞতা থাকার বিষয়টি বাতিল করার কারণ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে নানা অভিযোগের পরও ২০২৩ সালে ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং কাজের অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবার তাদেরকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিতে শর্ত শিথিল করে দরপত্র আহ্বান করার অভিযোগও উঠেছিল।
জানা যায়, আগামী দুই বছরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে, কুতুবদিয়া, সিসিজে, টিএসপি, সাইলো, রিভারমুরিং, কাফকো, সিইউএফএল ও অন্যান্য বিশেষায়িত জেটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের জন্য শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর তালিকাভুক্তির টেন্ডার আহŸান করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ৫ জুনের সেই টেন্ডারে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘যে সমস্ত শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর/স্টিভিডোরের ২০২৩ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স আপটুডেট আছে এবং যে সকল প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত আপটুডেট আছে সে সকল প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারবেন’।
অভিযোগ উঠে, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়নি। এমনকি ‘২০২৩ সালে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান’ উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ গতবছর অনিয়মের মাধ্যমে যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তাদের তালিকাভুক্তির জন্যই এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদায়ী চেয়ারম্যানের বদলি আদেশ জারি হয় ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল। তিনি এক প্রকার তড়িঘড়ি করেই মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল কোন গেজেট নোটিফিকেশন, পিপিআর, টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই এবং পেপার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স ইস্যু করেন।
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ২৩টি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে কোন প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রযোজ্য ‘রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগাং পোর্ট (কার্গো এন্ড কনটেইনার), ২০০১ এর প্রবিধান সংশোধন করার জন্য উদ্যোগ নেয়।
যদিও ওই সংশোধন ও সংযোজন বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হলে হাইকোর্ট চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এক রায়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন মতবিনিময় সভার আয়োজন না করেই একতরফাভাবে পুনরায় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি এস.আর.ও. জারির মাধ্যমে ‘রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগাং পোর্ট (কার্গো এন্ড কনটেইনার), ২০০১ সংশোধন করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়া সত্তে¡ও ১৩টি স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান এখনো কর্মহীন অবস্থায় আছে, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অর্থাৎ ৩২টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর বর্তমানে কর্মরত এবং বর্তমান সরকার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনা করে বন্দর পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিচ্ছে, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের বরাবরে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স ইস্যু করা এবং ওই ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য একতরফাভাবে ‘রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগাং পোর্ট (কার্গো এন্ড কনটেইনার), ২০০১ এর পরিবর্তন আনা কোন শুভ লক্ষণ নয়।