চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

শুঁটকি পল্লী এখন দিঘিনালায়

পাহাড়ে শুঁটকি খায় না এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া কঠিন। পাহাড়ি বাঙালিসহ পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীর মানুষের নিকট শুঁটকি প্রিয় খাবার। তাই এতোদিন স্থানীয় হাট-বাজারে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসা কেমিক্যালযুক্ত শুঁটকির ওপর ছিল স্থানীদের নির্ভরতা। এখন সে নির্ভরতা কাটিয়ে স্থানীয় শুঁটকিপ্রেমীরা ছুটছেন তরুণ উদ্যোক্তা সজিব চাকমার ভেজালমুক্ত শুঁটকি পল্লীতে। তরুণ এই উদ্যোক্তা কক্সবাজারের আদলে উপজেলার বাবুছড়ায় গড়ে তুলেছেন ভেজালমুক্ত এই শুঁটকি পল্লী। মাত্র তিন লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা এই শুঁটকি পল্লীর মাধ্যমে সজিব চাকমা হয়েছেন স্বাবলম্বী। পেয়েছেন সফল উদ্যোক্তার পরিচিতিও।

শুধু তাই নয় সজিব চাকমার ভেজালমুক্ত শুঁটকি পল্লীতে নানা প্রজাতির শুঁটকি পাওয়ায় হাট-বাজারের ফরমালিন কিংবা কেমিক্যাল যুক্ত শুঁটকির প্রতি আগ্রহ কমেছে স্থানীয়দের। কারণ সজিব চাকমার এই পল্লীতে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনো প্রকার ফরমালিন কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তাই স্থানীয়দের পাশাপাশি রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাইকারদের নিকটও এই শুঁটকির কদর বেড়েছে অনেকগুণ। কোনো প্রকার মেশিনের সাহায্য না নিয়ে সম্পূর্ণ রোদের তাপে শুকানোর ফলে এ শুঁটকি খেতেও সুস্বাদু এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। প্রথমে সুদের ওপর টাকা নিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন সজিব চাকমার শুঁটকি পল্লীতে কাজ করে সংসার চালান ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে শুকানোর জন্য সজিব চাকমা বাড়ির পাশের জমিতে তৈরি করেছেন অসংখ্য বাঁশের মাচা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই বাঁশের মাচায় রোদের তাপে শুকানো হচ্ছে ছুরিসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি। প্রতি চালানে আড়াই থেকে তিন মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে শুকানো হয় এই বাঁশের মাচায়। এসময় কথা হয় শুঁটকি নিতে আসা বেবী চাকমা, প্রতিভা ত্রিপুরা ও কামনা ত্রিপুরাসহ স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতার সাথে। তারা জানান, ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি নিতে আমরা এই এই পল্লীতে এসেছি। সজিব চাকমার উৎপাদিত শুঁটকি ভেজালমুক্ত হওয়ায় খেতেও সুস্বাদু।

তরুণ উদ্যোক্তা সজিব চাকমা জানান, এইচএসসি পাশ করার পর পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে আর লেখাপড়া হয়নি। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে ভেজালমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমে সুদের ওপর তিন লাখ টাকা নিয়ে শুরু করি শুঁটকি উৎপাদন। শুরুতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়েছি। লাভও হচ্ছে প্রত্যাশা অনুযায়ী। তবে লভ্যাংশের বেশির ভাগই চলে যায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে। তাই সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়া গেলে সফলতার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে জানান তরুণ এই উদ্যোক্তা। উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক তৎযিম চাকমা জানান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহের মাধ্যমে ভেজালমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তরুণ উদ্যোক্ত সজিব চাকমা। উৎপাদনে কোনো প্রকার ফরমালিন কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় স্থানীয়দের পাশাপাশি পাইকারদের নিকটও ইতিমধ্যে এ শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *