জাতীয়

শেষ জীবন গ্রামের বাড়িতেই কাটাতে চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের শেষ সময় গ্রামে এসে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছেন, আমি গ্রামে এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াব, ভ্যানে করে ঘুরবো। ঢাকা শহরে তো আমার বাড়িঘর নেই, গ্রামে এসে গ্রামের বাড়িতেই শেষ জীবন কাটাতে চাই।

তিনি শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত টুঙ্গিপাড়া ‍উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার মানুষই আমার আপনজন। আমার এই নির্বাচনটাও তারা করে দিয়েছেন। কাজেই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যবান যে আমার নিজের জায়গা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সবাই ছুটাছুটি করে, কিন্তু আমি তো সময় পাই না। আমাকে সারা বাংলাদেশ দেখতে হয়। এবারের নির্বাচনও আপনারা করেছেন। বিশেষ করে নারীদের মিছিল দেখে এতো ভালো লেগেছে যে বলতে পারবো না।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বলছিলেন আমরা নাকি ১০০ বছরে ক্ষমতায় আসতে পারবো না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কখনো বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। আসলে আল্লাহ কাকে যে কখন কি করেন তা তিনি ঠিক করেই রেখে দেন। তার অভিশাপ আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়, আর তার জন্য প্রযোজ্য হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। ষড়যন্ত্র এখনো আছে। এই খুনি, চক্রান্তকারী, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার করেছি তাদের একটা চক্রান্ত আছে। আন্তর্জাতিক পর্যা‌য়ে একটা চক্রান্ত আছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটার প্রতি অনেকেরই নজর আছে। কাজেই এখানে বসে কেউ অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, এখান থেকে কোনো দেশে আক্রমণ করবে সেটা তো আমি মেনে নেব না।

আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা স্বাধীনভাবেই চলবো। আমাদের দেশ ছোট কিন্তু জনসংখ্যা আছে। জনগণই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিলাম যাতে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। উদ্দেশ্য ছিল আমার যাতে ভোট বেশি আসে। আর প্রতিযোগিতাটা হয়। কারণ বিএনপি ইলেকশন করবে না, ওরা যে করবে না সেটা আমরা জানি। ওরা নির্বাচন করবে- ওদের নেতা কোথায়? যারা নির্বাচন করে তাদের সামনে একজন থাকে প্রধান হয়ে, যে দেশ চালাবে। ওদের কারো তো সে যোগ্যতা নেই। একজন তো দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি আর এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আরেকজন তো গ্রেনেড হামলা মামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ড্যারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এটা কিন্তু আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে। তারা সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তাদের সাক্ষ্যতেই তার সাজাও হয়েছে। তবে এদের লজ্জা নেই। আসলে বিএনপির সামনে যেহেতু নেতৃত্ব নেই তাই তারা ইলেকশনও করবে না। তারা ইলেকশন বানচাল করতে চেয়েছিল। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, সবচেয়ে জঘন্য কাজ হলো রেলে আগুন দেওয়া। যেখানে মা আর শিশু কীভাবে পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেল।

২০১৩ সালেও এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ১৪-তে করলো, ১৫-তে করলো। এবার আবার শুরু করলো। ২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে পিটিয়ে মারলো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, জাজেজ কোয়ার্টারে হামলা জঘন্যতম কাজ করে তারা নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

এর আগে যতদিন শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিং করেছে আমরা বাঁধা দিইনি। তখন তাদের অবস্থা একটু ভাল ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর তাদের আসল রূপ বের হয়ে আসে।

হাসপাতালে কি কেউ আক্রমণ করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই ইসরায়েলিরা করছে প্যালেস্টাইনে। আর তারেক জিয়ার হুকুমে বিএনপি জামায়াত করছে আমাদের দেশের মানুষের ওপর। হাসপাতাল আর অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে তারা দেখালো যে তারা ওদের ওদেরই লোক।

আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। আমরা নতুন কেবিনেট করেছি। সেটাও তাদের লাগে। শুনলাম বলছে এতো তাড়াতাড়ি কেন সরকার গঠন করলাম। আমাদের তো সব তৈরি আছে আমরা করবো না কেন? আমরা সিদ্ধান্ত নিতে কখনো পিছপা হই না। জানি ইলেকশন হবে। ইলেকশনে জিতলে কি করবো এটা তো আগেই তৈরি করা থাকবে। তাহলে সময় লাগবে কেন? আমি সময় নষ্ট করবো কেন? আমার কাছে একটা দিনেরও মূল্য আছে। আমাদের তো উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।

বিএনপি নেতা রিজভিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার দেখলাম তাদের অফিসের তালা ভাঙছে। সেই রবীন্দ্রনাথের গানটাই মনে পড়ে ”ভেঙে মোর ঘরের চাবি, কে আমারে নিয়ে যাবি” আমি ঠিক জানি না রিজভী সাহেব এই গান গাইতে গাইতে তালা ভাঙছিলেন কিনা। আর তালা ভেঙে কাকে বের করলেন তাও জানি না। বলে যে চাবি খুঁজে পাচ্ছে না, তাহলে তালাটা লাগালো কে? এই তালার কোনো সিলগালা ছিল না কাজেই এটা পুলিশ লাগায়নি। একটা ভালো তালা তারা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছে। এটা একটা নাটক। এই নাটক করে মানুষকে কিছুদিনের জন্য ধোঁকা দেওয়া যায়। সব সময়ের জন্য না।

এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখা। জিনিসের দাম যেটা বেড়ে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা, আমি গ্রামে-গঞ্জে খুব অসুবিধা দেখি না। কিন্তু যারা নিদিষ্ট আয়ের মধ্যে তাদের একটু সমস্যা। ঢাকা শহরে একটু বেশি। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় সবসময় একটু বেশি। বাজারে কিন্তু জিনিসের অভাব নাই। খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু মনে হয় যে কেউ জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করে। সেটাও আমাদের যথাযথভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। আর আমাদের উৎপাদনটা বাড়াতে হবে।

এর আগে ঢাকা গণভবন থেকে সড়ক পথে পদ্মা সেতু হয়ে দুদিনের সফরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ দিন বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নির্বাচনী এলাকার কোটালীপাড়া যাবেন। কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স চত্বরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এতে আওয়ামী লীগ, সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজন উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বলে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো গোপালগঞ্জ জেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোটালীপাড়া উপজেলার নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে মুখিয়ে আছেন। রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *