চট্টগ্রাম

শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান

নানা আয়োজনে মে দিবস উদযাপন করেছে চট্টগ্রামের প্রগতিশীল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের সম্মিলিত মোর্চা ‘মে দিবস উদযাপন পরিষদ’ ।

বুধবার (১ মে) বিকেলে নগরের চেরাগি চত্বরে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের পক্ষে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ।

বোধন আবৃত্তি পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আজম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা, নাভানা ব্যাটারিজ শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আবু তাহের ও চট্টগ্রাম জেলা সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের সংগঠক ইমরান চৌধুরী।

শ্রমিক নেতা আবু তাহের বলেন, ‘দেশের শিল্প-কারখানার মালিকরা শ্রম আইন মানেন না।

তাদের শ্রম আইন মানানোর জন্য সরকার কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো ভূমিকা রাখা হয় না। বরং প্রশাসন নানাভাবে মালিকদের তোয়াজ করে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে মালিকরা দেশের আইনকানুন, শ্রমিকের স্বার্থের আন্তর্জাতিক বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন। এর মধ্যেও একটি সুখবর হচ্ছে, শ্রমিকের মামলায় একজন মালিক, যিনি আবার নোবেল বিজয়ী, তার সাজা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে শ্রমিক শোষণকারী মালিক কি শুধু ড. ইউনূস একজনই ? পুঁজিপতি মালিকরা তো সবাই কোনো না কোনোভাবে শ্রমিকদের শোষণ করে চলেছেন। তাহলে সব মালিককে কেন আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না ?’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ মালিকরা পদে পদে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করছেন। কথায় কথায় ছাঁটাই, বেতন কেটে নেয়া, মামলা-হামলা, হয়রানি তো আছেই। আবার শ্রমিকদের নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলেও বিভ্রান্ত করেন। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অধিকারের সংগ্রাম খুবই কঠিন হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে হবে। ’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ বলেন, ‘২২ বছর আগে আমরা চট্টগ্রামের বেশকিছু প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গণসংগঠন, যারা বিভিন্নভাবে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার ছিলাম, তারা বিক্ষিপ্তভাবে না থেকে এক কাতারে এসেছিলাম। সেই থেকে আমরা মোর্চা গঠন করে মে দিবসের দিনে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির মাধ্যমে একমঞ্চে এসে শ্রমিকের জন্য লড়াই-সংগ্রামের কথা বলে যাচ্ছি। প্রথমদিকে আমরা চেরাগি পাহাড় মোড়ে এ কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে আমরা করতাম। কিন্তু ডিসি হিলে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার দুঃখজনক সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আবার চেরাগি পাহাড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হই। আমরা এ কর্মসূচি থেকে ডিসি হিল খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গানের মধ্য দিয়ে, কবিতার মধ্য দিয়ে, সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে এদেশের মেহনতি মানুষকে সংগ্রামের ডাক দিয়ে যাচ্ছি। এদেশের একজন মানুষও যাতে তার ন্যায্য অধিকারটুকু পায়, প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ যাতে একজন সুনাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে, সেজন্য সংগ্রামের প্রয়োজন। সেই সংগ্রাম হতে হবে সংস্কৃতির সংগ্রাম। সংস্কৃতি ছাড়া রাজনীতি অর্থহীন। মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনাবোধ জাগ্রত করতে না পারলে লড়াই-সংগ্রাম বেগবান হবে না। ’

আলোচনা সভার পর উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীদের গণসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হয়। পরিষদভুক্ত সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা বৃন্দ ও দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেন। নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় ওডিশি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্টের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এছাড়া গান-নাটক, কবিতাসহ আরও আয়োজনে অংশ নেন ফেইম স্কুল অব ডান্স ড্রামা এন্ড মিউজিক, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটের সদস্যরা।

এছাড়া রক্তকরবী, দেবাঞ্জলী সঙ্গীতালয়, একুশ মানবিকতা ও আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র, সুরাঙ্গন বিদ্যালয় ও রাগেশ্রী সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রের শিল্পীরা তাদের পরিবেশনা নিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *