রাজনীতি

সংকট কাটাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চান ১৪ দলের নেতারা

চলমান সংকট কাটাতে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে চান ১৪ দলের নেতারা।

নেতারা জানান, অনেক দিন ধরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের অন্য দলগুলোর একটা দূরত্ব চলছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এবং এর পরে এ দূরত্ব আরও বেড়েছে। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে জোট থাকবে কিনা এ ধরনের আশঙ্কাও করছেন জোটের অন্য দলগুলোর নেতারা। নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত জোটের কোনো বৈঠক হয়নি। ১৪ দল আগের অবস্থানে ফিরে যাবে সেই পরিস্থিতিও তারা তেমন একটা দেখছেন না।

এদিকে ১৪ দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এ জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বৈঠকের কথা বলেছিলেন। কিন্তু অন্য দলগুলোর নেতারা বৈঠকে রাজি হননি। তারা আগে জোট নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছাড়া জোটের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে তারা রাজি না। তবে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বৈঠক হলে সেটা অনানুষ্ঠানিক হতে হবে এবং সেখানে জোটের নেতারা তাদের কথা জানাবেন। এমনটাই জোট নেতারা জানিয়েছেন বলে সূত্র আরও জানায়।

এদিকে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ জোটের কোনো কোনো দল জোটটির আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না। আওয়ামী লীগের অবস্থানের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা বেশি কিছু বলতে চান না। জোটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ বা দায় যাতে কারো ওপর না পড়ে সে ব্যাপারেও তারা সতর্ক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটভুক্ত একটি দলের এক নেতা বলেন, আমরা আগ বাড়িয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যাবো না। জোটের নেতৃত্বে আছে আওয়ামী লীগ, তারা কী করে দেখি।

১৪ দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জোটের অন্যতম নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খন মেনন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, না, ১৪ দল নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না।

এদিকে ১৪ দলের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নিজস্ব কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এ জোটের কোনো কোনো দল। আওয়ামী লীগ ছাড়া জোটের অন্য দলগুলোকে নিয়ে যাতে ঐক্যবব্ধভাবে মাঠে থাকা যায় সে চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে বলে নেতারা জানান। দ্রব্যমূল্য, জনজীবনে সংকট, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ এ ইস্যুগুলোতে কর্মসূচি দিয়ে জোটের অন্য দলগুলো একসঙ্গে যাতে থাকতে পারে সে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া অন্য কয়েকটি বাম দল সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান বলেন, আমরা নিজেদের দলের কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। জনজীবনে যে সংকটগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা কর্মসূচি দেবো। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ এসব ইস্যুতে। ১৪ দলের অন্য যারা আছে তারাও যুগপৎভাবে বা ঐক্যবব্ধভাবেও কর্মসূচিতে থাকতে পারে। এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

এদিকে ১৪ দলের চলমান সংকট কেটে যেতে পারে এ সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। এর আগেও ১৪ দলের প্রায় ২০ বছরের পথ চলায় কখনও কখনও দূরত্ব, টানাপোড়েন, নেতাদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেসব পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এ জোট। বিশেষ করে ১৪ দলের নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোট নেতাদের নিয়ে বসলে চলমান সংকটও কেটে যাবে এমন প্রত্যাশাও আছে। গত নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে অবস্থায় ছিল তা একটু একটু করে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান যুক্ত হচ্ছে। যে প্রয়োজনে ১৪ দল গঠন হয়েছিল সে প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি। এখন আওয়ামী লীগ কী অবস্থান নেয় তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে বলে ১৪ দলের কোনো নেতা জানান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের আরেক জন অন্যতম নেতা জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ দলের নতুন কিছু নেই, শুনেছি ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী জোটের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। এর বেশি কিছু আর বলতে পারছি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *