আন্তর্জাতিক

সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মোদির বিজেপি, জোটেই ভরসা

শুরু সেই ২০০২ থেকে। গুজরাটে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বারবার জিতিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনেও তার নেতৃত্বে বিপুলভাবে বিজেপি জিতেছে এবং একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের জায়গায় পৌঁছে গেছে। এবারই ব্যতিক্রম হলো। ২২ বছরের মধ্যে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এই প্রথমবার পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদি।

ষষ্ঠ দফা ভোট শেষে যখন নির্বাচনি হাওয়া বিজেপির খুব একটা অনুকূলে নেই বলে গুঞ্জন চারদিকে, ঠিক সেই সময় নিজেকে দেবতা প্রেরিত পুরুষ বলে দাবি করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি নেতার আধ্যাত্মিকতার ঝোঁক এখানেই শেষ নয়, সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটের প্রচার শেষ করেই কন্যাকুমারীর উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সেখানকার বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালের ‘ধ্যানম পম’-এ ৪৮ ঘণ্টার ধ্যানে বসেন তিনি।

এত কিছুও করেও শেষ রক্ষা হলো না মোদির দলের। দেবতা প্রেরিত পুরুষ ঘোষণা করেও দলের পতন ঠেকাতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ দামোদর দাস। ১০ বছর পর এবার বরং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল তার দল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ফলে একদলীয় শাসনের সমাপ্তি হতে চলেছে ভারতে। এখন মোদিকে তার ‘পরমাত্মা’ নয়, আশ্রয় নিতে হবে জোটের শরিক বিশেষ করে টিডিপি ও জেডিইউর কাছে। এনডিটিভির সবশেষ খবর অনুযায়ী ৫৪৩ আসনের মধ্যে দল হিসেবে বিজেপি ২৪৪ আসন নিয়ে জোটগতভাবে (এনডিএ) ২৯২ আসন দখল করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩২ আসন। যেখানে কংগ্রেসের দলীয় আসন ৯৮টি।

‘আব কি বার, ৪০০ পার’ এই স্লোগান দিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (এনডিএ) নিয়ে উচ্চাশা ছিল মোদির। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (ইন্ডিয়া) জোট নিয়ে এক দশক পর ক্ষমতায় ফেরার আশা করছে কংগ্রেস। বিজেপির দাবি ছিল তারা এবার চারশোর বেশি আসনে জয় পাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি হয়ে গেছে। মোদি ম্যাজিকে নেমেছে ধস! ৪০০ পার করা দূরে থাক, ১০ বছর পর নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতাই হারালো দলটি। কিন্তু সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আড়াই শ আসনও পায়নি বিজেপি। সকাল থেকে ভোট গণনা শুরুর পরই পাল্টে যেতে থাকে সব সমীকরণ। বিজেপির এমন অবনতির বিশ্লেষণও শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

ভারতে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। বিজেপি এককভাবে এই সংখ্যক আসন পাচ্ছে না বলে সরকার গড়তে জোটের সহায়তা নিতে হবে দলটির। মোদিকে এখন নির্ভর করতে হবে এনডিএ-র দুই শরিক নেতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু, নীতীশ কুমারের ওপর। ঘটনাচক্রে, অতীতে ওই দুই নেতারই একাধিক বার এনডিএ ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে।

এদিকে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এক দশক পর একদলীয় শাসনের ইতি হতে যাচ্ছে ভারতে। সেই সঙ্গে ১৮তম লোকসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরতে চলেছে বিরোধী দলনেতার পদ। তবে ভারতের ইতিহাসে মোদিই হতে চলেছেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর তিনবার ক্ষমতায় এলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর মতো পর পর তিনবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখলের রেকর্ড করা সম্ভবত হচ্ছে না তার। যদিও জোটগতভাবে এখনো নরেন্দ্র মোদিই তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে ধারণা। তবে জোট সরকার গঠনের আশা ছাড়ছে না কংগ্রেসও। তারাও সরকার গঠনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না। ভারতের লোকসভায় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হলে একটি দলকে অন্তত ২৭২টি আসন পেতে হবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি কিংবা কংগ্রেসÑ কেউই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পায়নি। কাজেই ক্ষমতার আসনে বসতে হলে তাদেরকে অন্যদলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হবেই। আপাতদৃষ্টিতে সরকার গঠনের দৌড়ে মোদী এগিয়ে রয়েছে মনে হলেও মুহুর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে যদি মিত্র দলগুলো জোট বদলের সিদ্ধান্ত নেয়। মোদীর নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র দলগুলোর মধ্যে বিজেপির পরে বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং তেলেগু দেশম পার্টি। এই দু’টি দল অন্তত ৩০টি পেতে যাচ্ছে। কাজেই তারা এনডিএ থেকে বের হয়ে যদি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটে যোগদান করে, তাহলে কংগ্রেসের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। দল দু’টির কথা বলা হচ্ছে, কারণ তারা মোদীর জোট যাওয়ার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলো। এখন পুনরায় তাদেরকে জোটে ফেরাতে পারলে কংগ্রেসের সরকার গঠনের আশা জোরালো হবে নিঃসন্দেহে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *