চট্টগ্রামবাঁশখালী

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এক সাংবাদিকের ভাইকে মারধরের ঘটনায় অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বাড়ি এলাকায় সংঘটিত ওই ঘটনায় আজ রবিবার (২৩ জুন) মামলা রেকর্ড করেছে বাঁশখালী থানা পুলিশ।

এর আগে গত ১৬ জুন ভুক্তভোগী সাংবাদিকের মা সুলতানা ইয়াছমিন রিনা (৪৭) বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম (৪৫), একই এলাকার আবু সুলতানের ছেলে আনোয়ারুল আজমসহ (৫০) অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনকে বিবাদী করা হয়।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ জুন খানখানাবাদ ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম নিয়ে তথ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত আইপি টিভি জেএ টিভিতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক গাজী গোফরান। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধা ৬টায় খানখানাবাদ জেলেপাড়া বাজার এলাকায় ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলামসহ ৭ থেকে ৮ জন লোক ‘তোর ভাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিউজ করেছে কেন?’ বলে গাজী গোফরানের বড় ভাই মো. বোরহান উদ্দিনকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাঠি দ্বারা আঘাত করতে থাকে। এসময় স্থানীয়রা গুরুতর আহত বোরহানকে উদ্ধার করে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। বোরহান ২৩নং খানখানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। আসামি ইউপি সদস্যের হুমকির ভয়ে বোরহান রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মামলার বাদী সুলতানা ইয়াছমিন রিনা একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে মেম্বার আনোয়ার আমার ঘর জ্বালিয়ে দিবে, আমার ছেলেদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করবে এবং আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তাদের হুমকির ভয়ে আমার বড় ছেলে বোরহান উদ্দিন বাড়িছাড়া। আমাদের পুরো পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেম্বার ও তার লোকজনের হুমকির কারণে আমার দুই ছেলে কোরবানির ঈদে বাড়ি আসতে পারেনি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল আমার এক ভাতিজি জামাইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে আপোষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আজ (২৩ জুন) বাঁশখালী মেম্বার এসোসিয়েশনের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। তারা আপসে রাজি হওয়ায় আমরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি বাতিল করেছি। এখন আপসের কথা বলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে দিলো।’

এদিকে বাঁশখালী মেম্বার এসোসিয়েশন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি বলে জানান সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘সংগঠনের নাম ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূত কেউ বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করলে মেম্বার এসোসিয়েশন দায়ী নয়। মেম্বার এসোসিয়েশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ঔক্য মতের সংগঠন। আনোয়ার মেম্বার এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল কারও সাথে আলাপ না করে নিজে নিজে মানববন্ধন কর্মসূচি দিলে তো হবে না।’

বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার পর আমরা গতরাতে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়েছিলাম এরেস্ট করার জন্য। কিন্তু তখন তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওনি পলাতক রয়েছেন। আমরা সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, খানখানাবাদ ইউনিয়নের এক হাজার জেলের জন্য মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে ৫৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৭ টায় খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা এসব চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে চালের বস্তা খোলা শুরু করেন। তখন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি চালের বস্তা খোলার আগে সব বস্তা গুণে তারপর বিতরণের কথা বলেন। এসময় জনসমক্ষে সব বস্তা গণনার পর ১৬ টন চাল কম পাওয়া যায়। অপরদিকে খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দারের কাছ থেকে চাল বুঝে পাওয়ার রশিদ চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

এই বিষয়ে সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইলে পরিষদের পক্ষ থেকে তারা তাৎক্ষণিক কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এসময় এমপি মুজিবুর রহমান জেলের চাল আত্মসাতের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সেখানে একটি ট্রাকভর্তি ৫ টন চাল জব্দের নির্দেশ দেন সাংসদ। পরে সেগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *