তথ্যপ্রযুক্তি

সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টেলিটক

সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। নিম্নমানের সেবা ও বছরের পর বছর লোকসানে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমানকে তুলাধুনা করেছে কমিটি।

সোমবার (২০ মে) জাতীয় সংসদ ভবনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে টেলিটকসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়েও আলোচনা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান টেলিটকে বিনিয়োগের পরেও কী কারণে গ্রাহক বাড়ছে না, এ নিয়ে কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই কথা বলেন। তারা টেলিটকের নিম্নমানের নেটওয়ার্ক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে এক সদস্য বলেন, প্রতিষ্ঠান লোকসানে থাকায় সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে না। সবার মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব মনে হচ্ছে। টেলিটকের কর্মচারীরা বসে বসে সরকারি বেতন নেন কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে। কমিটির পক্ষ থেকে টেলিটককে লাভজনক করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) দেওয়ার কথাও বলা হয়। তবে এ নিয়ে কোনও সুপারিশ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম হাবিবুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

টেলিটকসহ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থাগুলো কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করানো যায়, এ জন্য কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রধান করে আহ্বায়ক কমিটি এবং আইন প্রণয়নের বিষয়ে তারানা হালিমকে প্রধান করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে কমিটির কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে টেলিটকের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। টেলিটককে লাভজনক করার কিছু পদক্ষেপের কথা তিনি বলতে যান। তখনই আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেলিটকের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করা হয়েছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার বিনিয়োগ করলেও টেলিটক লাভজনক হয়নি। তিনি টেলিটককে বাংলালিংকের সঙ্গে অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারিং বা অ্যাকটিভ টাওয়ার শেয়ারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার পক্ষে মত দেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলেও মনে করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী পলক অভিযোগ করে বলেন, টেলিটক প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভুল তথ্য দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে তিনি কমিটির কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

অবশ্য সোমবারের (২০ মে) বৈঠকেও টেলিটককে লাভজনক করার পদক্ষেপের বিষয়ে একটি পতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, দেড় যুগ আগে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে টেলিটকের যাত্রা শুরু হয়। গত অর্থবছর (২০২২-২৩) পর্যন্ত টেলিটকের মোট লোকসান হয়েছে এক হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিট লোকসানের ধারাবাহিক প্রবণতার প্রতিফলন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেলিটক কেবল ২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে মুনাফা করতে পেরেছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ১৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ১৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বেসরকারি তিনটি মোবাইল ফোন অপারেটরের তুলনায় টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা অনেক কম। আবার অপারেটরটির সেবার মান নিয়েও গ্রাহকের অসন্তোষ রয়েছে।

কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন— কমিটির সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বি এম কবিরুল হক, নজরুল ইসলাম বাবু, আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার, আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, তারানা হালিম এবং সিদ্দিকুল আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *