সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে চকরিয়া সাফারি পার্কের দৃশ্যপট
ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। পার্ক কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিনোদন স্পটটিতে নগন্য পর্যায়ে নেমে এসেছে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আগমন। পার্কের সর্বত্র ক্ষতচিহ্ন ছোটবড় ভাঙা কাঁচ, ভাংচুর করা আসবাবপত্র, এটি এখনো কাগজে কলমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক’ থাকলেও গেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুছে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক লেখা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন বিকেল সাড়ে ৪ টার অন্তত দেড় হাজার উশৃঙ্খল ব্যক্তি নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে পার্কে যায়। তাÐব চালায় রাত ২ টা পর্যন্ত। দিনের আলোতে ফাঁকা গুলি বর্ষণের মাধ্যমে ভীতি ও বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে হামলাকারীরা। প্রথমেই ভেঙে ফেলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। পর্যায়ক্রমে প্রশাসনিক ভবন, রেস্ট হাউস, নবনির্মিত ক্যান্টিন, বিভিন্ন আবদ্ধ প্রাণীর বেষ্টনী, দুটি নন-এসি সাফারি বাস, একটি মোটরসাইকেলসহ ২৭ টি স্থাপনায় ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। দুটি মোটরসাইকেল আগুন লাগিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। বাংলোসহ কয়েকটি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়। এমনকি নানা পণ্যের পাশাপাশি রক্ষা পায়নি ফুলসহ নানা প্রজাতির গাছের চারাও। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বাদী হয়ে ১৫ আগস্ট চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৩৮৪/২৪) দায়ের করেন। জিডিতে দাবি করা তথ্য মতে, বাস পার্কিং, বাস পার্কিং এলাকার সীমানাপ্রাচীর, সাফারি পার্কের স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন বাইরের গেট, বঙ্গবন্ধু চত্ত¡র, সদ্যনির্মিত সাফারি ক্যান্টিন, সাফারি ব্রিজ, রেস্টিং শেড, পিকনিক স্পট ওয়াশরুম, পিকনিক স্পট কিচেন রুম, ইকো ফ্রেন্ডলি ডাস্টবিন, কার পার্কিং সংলগ্ন ওয়াশরুম, কার পার্কিং, তরিকা হোটেল সংলগ্ন সেন্ট্রি পোস্ট, প্রধান ফটক, টিকেট কাউন্টার, প্রবেশ গেট, প্রবেশ গেট সেন্ট্রি পোস্ট, ইনার ওয়াশ ব্লক, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, ঈগল পরিদর্শন বাংলো, ময়ূরী বিশ্রামাগার, পাখিশালা-১ যানবাহন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও গার্ডেন লাইট ভাংচুর ছাড়াও লুটপাট করা হয়।
গতকাল (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার প্রধানসড়ক সংলগ্ন প্রধান ও প্রবেশের পৃথক দুটি গেটের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ মুছে ডুলাহাজারা লেখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চত্ত¡রের রেলিং এবং প্রচীরসহ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এখন আর নেই। মুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং প্রাচীর রেলিংয়ের অস্তিত্বও নেই। এই চত্বরে রোপিত শোভাবর্ধনকারী ৭৫০০ টি চারার মধ্যে বেশিরভাগ চারাই উপড়ে ফেলা হয়েছে।
টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত একজন জানান, ৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর (গতকাল) পর্যন্ত দর্শনার্থী তেমন আসছেই না। গত ২৬ দিনের মধ্যে শুরুমাত্র ৩১ আগস্ট শ’খানেক দর্শনার্থী এসেছিলেন।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, সরকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার উশৃঙ্খল ব্যক্তি পার্কে হামলা ও লুটপাট শুরু করে। রাত ২ টা পর্যন্ত তাদের হামলা লুটপাট ও ভাংচুরে পার্কটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।’