দেশজুড়ে

সহিংসতায় মাদারীপুরে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতায় মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন স্থানের অন্তত দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবেই সিসিটিভি ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করায় চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে পারে বলে মনে করছেন শহরবাসী।

জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তেলের পাম্প, সার্বিক বাস ডিপো, পুলিশ ফাঁড়ি ও পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিটি সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ঘটনাকে আড়াল করতেই নষ্ট করা হয় এসব সিসিটিভি ক্যামেরা।

৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬০টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল শহরের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গত ২৯ মে এর উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার মাসুদ আলম।

গত ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের আন্দোলনে ছাত্রলীগ, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় শতাধিক। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা চারটি মামলায় অভিযুক্ত দুই শতাধিক। গ্রেপ্তারও হন অন্তত ৮২ জন।

স্থানীয় ও একাধিক সূত্র জানায়, শহরের গোলাবাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াত হয়। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানটির সড়কে বসানো অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরাটি গত ১৮ জুলাই নষ্ট করা হয়। জেলা জজ আদালতের সামনে বসানো ও এলজিইডি অফিসের মূল ফটকে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়াও একইভাবে নষ্ট করা হয়েছে বাণিজ্যিক নগরী শহরের পুরানবাজার এলাকার এক ডজন ক্যামেরাসহ দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। এখানকার কোনটির বক্স আছে তো ক্যামেরা নেই, আবার কোনটির ক্যামেরা আছে তো বক্স নেই। এমন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় শহরবাসী। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা।

মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার ইলেকট্রিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাইনুল হাসান লিপু বলেন, পুরো শহর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। এই ক্যামেরাগুলো নষ্ট করার কারণে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ক্যামেরাগুলো সচল না থাকায় শহরে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তাই দ্রুত নষ্ট হওয়া সব ক্যামেরা চালু করা প্রয়োজন। এতে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা ও রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারবে।

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এই ক্যামেরাগুলো দ্রুত সংস্থাপন করা উচিত। তা না হলে নাশকতাকারীরা আবারও বিভিন্ন স্থানে হামলা করতে পারে। মোড়ে মোড়ে ক্যামেরা চালু থাকলে দুর্বৃত্তরা ভয়ে থাকবে, কমবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং প্রধান ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ক্যামেরাগুলো স্থাপনের পর শহরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে গিয়েছিল। যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের ধরতে সহায়ক বন্ধু হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল এসব ক্যামেরা।

তিনি আরও বলেন, নাশকতাকারীরা তাদের অপরাধ ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করেছে। ক্যামেরা নষ্ট করার আগে তাদের ছবি রেকর্ড হয়ে আছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুতই সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. শফিউর রহমান জানান, প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীরা এই ক্যামেরাগুলো ধ্বংস করেছে। এসব অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের ধরতে চলছে অভিযান। আর নষ্ট হওয়া ক্যামেরাগুলো পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *