চট্টগ্রাম

সাদিয়ার অক্ষরের জাদুতে তৈরি হয় শৈল্পিক ক্যালিগ্রাফি

গুটিকয়েক মানুষই বোধহয় ক্যালিগ্রাফির জাদুতে মুগ্ধ করেছেন চারপাশের মানুষকে। তেমনই একজন সাদিয়া ইসলাম। স্নাতক শেষ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে। বাড়ি ফেনী জেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে থাকেন চট্টগ্রাম শহরেই।

ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাআঁকি ভালো লাগতো সাদিয়ার। কিন্তু পড়াশোনা আর পরিবারের চাপে সেভাবে কখনও শেখা হয়ে ওঠেনি। প্রবল ইচ্ছা, আগ্রহের কারণে তার হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে একেকটি শৈল্পিক ক্যালিগ্রাফি।

গ্রিক শব্দ ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে এসেছে ক্যালিগ্রাফি শব্দটি। ক্যালি বলতে বোঝানো হয় ‘সুন্দর’ আর গ্রাফিয়া বলতে ‘লেখা’। সে অর্থে ক্যালিগ্রাফি বলতে হরফ বা অক্ষর ব্যবহার করে যে সুন্দর লেখন শিল্প প্রকাশ করা হয়, তাকে বোঝানো হয়। ক্যালিগ্রাফি পছন্দ করেন না এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সাদিয়া বিয়ে করেছেন দুই মাস হলো। এরই মধ্যে তার ক্যালিগ্রাফির কথা জানতে পারে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারাও তাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন। এতেই বেজায় খুশি সাদিয়া। বিয়ের দুই মাসের মধ্যে শ্বশুর বাড়ির ঘর সাজিয়েছেন আপন মনে। ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্যে আলোকিত ঘর। দেখে যেন মনে হবে অনেক টাকায় সাজানো এ বাড়ি। এ সৌন্দর্যের পেছনের কারিগর তাদের বউ।

পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সাদিয়ার। বর্তমানে আরবি ক্যালিগ্রাফির পাশাপাশি হ্যান্ড পেইন্ট নিয়েও কাজ করছেন তিনি।

সাদিয়া জানান, নিজের চেষ্টায় সবকিছু শিখেছেন। ভেতরের শিল্পী সত্তা ক্যালিগ্রাফার হতে সাহায্য করেছে। প্রতিটি অক্ষরের সঙ্গে রয়েছে ভালোবাসা। আমি মূলত কোরআনের ক্যালিগ্রাফি বেশি করি।

তিনি আরও জানান, কোরআনের এক একটি হরফ মনের মাধুরী মিশিয়ে ক্যালিগ্রাফিতে ফুটিয়ে তুলতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন অনেক সময় এবং পরিশ্রমের। তবেই একটি সুন্দর ক্যালিগ্রাফি পূর্ণতা পায়।

অফলাইন এবং অনলাইন দুই জায়গায়ই বর্তমানে সাদিয়ার ক্যালিগ্রাফিগুলো বিক্রি হচ্ছে। শুরুটা অনলাইনের মাধ্যমে হলেও এখন তিনি অফলাইনেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন। তার মতে, বর্তমানে অনলাইন অনেক বড় একটি মাধ্যম, যেখানে নিজের কাজগুলো সবার সামনে প্রকাশ করা যায়। যার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সবার কাছে। তিনি নিজের ফেসবুক পেজে তার ক্যালিগ্রাফির প্রচারণা চালান। এ ছাড়াও Sadia’s Calligraphic Fountain নামে তার রয়েছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল।

আগামীর দিনগুলোতে নিজের কাজ সম্পর্কে সাদিয়া বলেন, শখ থেকেই শুরু। এখন সেটা নিজের আরেক পরিচয় তৈরি করেছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে। কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। ক্যালিগ্রাফির বর্তমানে দুইটি রূপ প্রচলিত। একটি ট্রেডিশনাল অন্যটি পেইন্টিং। বাংলাদেশে পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফির প্রচলনই বেশি। আমি সাধারণত পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফি করে থাকি ক্যানভাসে এবং দেয়ালে।

‘আমি দুই ধরনের ক্যালিগ্রাফি করে থাকি। সুম্বুলি ও সুলুস। সুলুস আরবি ক্যালিগ্রাফির একপ্রকার শৈলী। যেহেতু আমাদের কাছে সুলুস অধিক পরিচিত, তাই খত্তে সুলুস এর কাজ বেশি করা হয়। ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং দুই ধরনের মাধ্যমে করা হয়। একটি হচ্ছে ক্যানভাস পেপার যেটা গ্লাস ফ্রেমের জন্য উপযোগী অন্যটি ক্যানভাস যেগুলো কাঠ বা ফাইবারে গ্লাস ছাড়া ফ্রেম করা হয়। কালার মাধ্যম হিসেবে এক্রেলিক ব্যবহার করি। এরাবিক ক্যালিগ্রাফিতে সাধারণত কোনো সূরা বা সূরার নির্দিষ্ট কিছু আয়াত দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়।

দেশে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই শখের আর্ট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ক্যালিগ্রাফিকে। ক্যালিগ্রাফি করে তারা একদিকে যেমন এই শিল্পে অবদান রাখছেন, অন্যদিকে ক্যালিগ্রাফি বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। রঙতুলির ছোঁয়ায় একেকটি ক্যালিগ্রাফি হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন, মনকাড়া শিল্পকর্ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *