চট্টগ্রাম

সাদ মুসা গ্রুপের এমডি ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

খেলাপি ঋণের মামলায় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদের ব্যবসায়ী সাদ মুসা গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ মহসিন ও তার স্ত্রী শামিমা নারগিস চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) মামলার বাদী ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাদী পক্ষের দরখাস্ত ও বিবাদী পক্ষের লিখিত আপত্তি শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দিয়েছেন। একই আদেশে বিবাদীরা আদালতের অনুমতি ব্যতীত যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালত ইমিগ্রেশন পুলিশকে আদেশের কপি পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মামলার নথিপত্র সূত্র জানায়, বাদীপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে উল্লেখ করেন, ৮৩ কোটি ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৫ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় এই মামলা দায়ের করে। বিবাদী মোহাম্মদ মহসিন একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। সুদ মওকুফ সুবিধাসহ নালিশি ঋণ দুই বার পুনঃতফশিল হওয়ার পরও বিবাদীরা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে এগিয়ে আসছে না। বাদী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে এই আদালতে অন্তত ১০ টি মামলা চলমান আছে। মামলাগুলোতে বিবাদীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাবিকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকার কম নয়। বিবাদীরা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে দেশত্যাগের পাঁয়তারা করছেন। বিবাদীরা দেশত্যাগ করার সুযোগ পেলে বাদী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ মহসিন দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং শিল্প উদ্যোক্তা। টেক্সটাইল শিল্পে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পরিশোধ করেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি নন। কোভিড মহামারিসহ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ব্যবসায়িক বিপর্যয় হওয়ায় যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণের বিপরীতে মূল্যবান সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট বন্ধক রয়েছে। বিবাদীদের দেশত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলে বিবাদীর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে।

দুই পক্ষকে শুনে শুনানিতে আদালত বলেন, নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় নালিশি ঋণ দুই দফা পুনঃতফশিল করা হলেও বিবাদীরা ঋণ পরিশোধে এগিয়ে আসেননি। বন্ধককৃত সম্পত্তি দ্বারা সম্ভাব্য ডিক্রি পরিতুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সুদ মওকুফসহ পুনঃতফশিল সুবিধা লাভের পরও নালিশি ঋণের কিয়ংদশও পরিশোধ না করায় প্রতীয়মান হয় বিবাদী একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। তাই তার বিদেশ গমনের অধিকার বিচারিক সিদ্ধান্তের অধীন থাকা সমীচিন মনে করি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ। নব্বইয়ের দশকে টেক্সটাইল ব্যবসার বিনিয়োগ শুরু করে গ্রুপটি। ১৯৯৪ সালে সাদ-মুসা গ্রুপ একাধিক খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই গ্রুপের এমডি মুহম্মদ মহসিন গড়ে তোলেন চট্টগ্রাম ফেব্রিক্স বোর্ড লিমিটেড, সাদ-মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড, এমএ রহমান ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাদ-মুসা হোম টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেডসহ একাধিক রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

জ্বালানি সংযোগে জটিলতায় গ্রুপটির বিনিয়োগ স্থবির হয়ে যায়। গ্রুপটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণ আদায়ে সাদ মুসা গ্রুপের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা চলমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *