চট্টগ্রাম

সিআরবিতে প্রতিদিন ইফতার ৪ শতাধিক দুস্থ-দিনমজুরের

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড় থেকে শিরীষতলার দিকে এগুতেই মাঠের কোনায় চোখে পড়বে সামিয়ানা টানানো বিশাল এক স্টল। দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হতে পারে কোনো ভাসমান দোকান। কাছে গেলেও সেই ভ্রম ভাঙতে সময় লাগতে পারে। ভেতরে সাজানো সারি সারি চেয়ার টেবিল, পাশেই প্রস্তুত হচ্ছে ইফতার। সিয়াম সাধনার মাস রমজানে যেন ক্রেতাদের জন্যই ইফতারের এ প্রস্তুতি বিক্রেতার। তবে সেখানে ইফতার প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে কথা বলেলে ভাঙবে ভ্রম।

তারা জানান, পবিত্র রমজানে দুস্থ অসহায় রোজাদারদের জন্যই এই আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ। প্রতিদিন শহরের চার শতাধিক দুস্থ মানুষের ইফতার পরিবেশন হয় সেখানে। এই ইফতার আয়োজন ঘিরে প্রতিদিন বিকেল থেকে সিআরবি ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিরীষতলায় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে জড়ো হয় কয়েকশ পথশিশু। সঙ্গে থাকেন রিকশা, অটোরিকশা চালক এবং পথচারীরাও শুধু তাই নয়, সেখানকার দুস্থ মানুষ ছাড়াও প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকার নিম্নআয়ের দেড়শ-দুশ মানুষকে ইফতার পৌঁছে দেয় সংগঠনটি।

বিদ্যানন্দের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. জামাল উদ্দিন জানান, প্রতিদিনের ইফতার তৈরির এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয় আগের দিন রাতে। রাতেই কাঁচামাল কাটাকুটি করে প্রস্তুত রাখেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সকালে সেহেরির পর নগরীর সাগরিকা এলাকায় নিজস্ব কিচেনে শুরু হয় রান্নার প্রস্তুতি। ইফতার তৈরির জন্য রাখা হয়েছে একজন পেশাদার বাবুর্চি। তাকে সহযোগিতা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। দুপুর নাগাদ শেষ হয় রান্না, এর পর রান্না করা ইফতারসামগ্রী নিয়ে আসা হয় সিআরবির শিরীষতলা এলাকায়।

প্রতিদিনের ইফতারের মেন্যুতে থাকে বাহারি পদ। সরবত, ডিম, পানি, খেজুর, ফিরনির মতো সাধারণ খাবারের সঙ্গে একেকদিন থাকে একেক পদের খাবার। গতকাল বিদ্যানন্দের ইফতারের মেনুতে প্রতিদিনকার খাবারের পাশাপাশি ছিল ছোলা, মুড়ি, পেয়াজু আর বেগুনি। এর আগের দিন, অথাৎ বুধবার ছিল ভুনা খিচুড়ি।

তিনি আরোও জানান, ইফতার প্রস্তুত শেষে সিআরবিতে পরিবেশনের সময় কাজ করেন আন্তত ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছে কয়েকজন। তাদের একজন জানান, পরিবার থেকে দূরে থাকায় ইফতারের সময় দুঃখ হতো। তবে বিদ্যানন্দে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজের মাধ্যমে অসহায় দুস্থদের সঙ্গে ইফতারের সুযোগ পান। এটা দারুণ উপভোগ করেন।

চট্টগ্রামে বিদ্যানন্দের এই ইফতার আয়োজনের সমন্বয়ক মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘এবার সারাদেশে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিদিন মোট ৩ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ইফতারের বড় আয়োজন চলছে ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মিরপুর, রাজশাহী এবং রংপুরেও। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানেও ছোট ছোট ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে অসহায়দের জন্য।’

বৃহস্পতিবার শিরীষতলায় বিদ্যানন্দের এই ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন সত্তরোর্ধ্ব সখিনা খাতুন। তিনি জানান, স্বামী সন্তান কেউ নেই তার, চলেন ভিক্ষা করে। পাশের এলাকায় এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে থাকেন। গেল কয়েক বছর ধরে বিদ্যানন্দের সঙ্গেই ইফতার করেন তিনি।

বিদ্যানন্দের সঙ্গে এদিন ইফতার করতে আসেন প্রতিবন্ধী মো. সোহেল। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। রাস্তাঘাটে যেখানে সুযোগ হয় সেখানে থাকি। গতবছরও আমি এখানে ইফতার করেছি। ওরা অনেক ভালো খাবার দেয়।’

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো কাজে আমরাও থাকতে পারি, এটা আমাদের প্রশান্তি দেয়। তবে বাচ্চারা হয়তো একটু ভালো খাবারের জন্য এখানে আসে। তবে তাদেরও কেউ কেউ রোজা রাখে। তাদের জন্য কাজ করে একটা শান্তি পাওয়া যায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *