সিএমএইচ-এ কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে দু’শতাধিক সফল সার্জারি
চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে দু’শতাধিক সফল সার্জারির পর তারা কথা বলতে পারে, স্কুলেও যায়।
ফাওয়াদ আলম বছর তিনেক আগেও কথা বলার কিংবা শোনার শক্তিও ছিল না। অথচ তার সঙ্গের শিশুরা তখন খেলছে, কথা বলছে। যা দেখে বড়ই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে ফাওয়াদের পরিবারের।
ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনার জন্য বহু চিকিৎসক-কবিরাজের দ্বারে দ্বারেও গিয়েছিলেন বাবা নুর আলম। কিন্তু বরাবরই হয়েছেন ব্যর্থ। সুখকর হচ্ছে- ছোট্ট ফাওয়াদ এখন কথা বলছে, খেলছে, অন্য শিশুর মতো যাচ্ছে স্কুলেও। যা স্বপ্নের মতো মনে হলেও ফাওয়াদ আলম এখন কেজি-১ এ শিক্ষার্থী।
দেখে বুঝার কোন উপায় নেই, এক সময়ে কথা বলা কিংবা শোনার শক্তি ছিল না তার। অন্য দশ শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা, কথা বলা ও শুনতে পারছে ফাওয়াদ। নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা ফাওয়াদের বাবা নুর আলম জানান, ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনতে পাবো, এটি ভুলেই গিয়েছিলাম। ২০২১ সালে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে এসে যখন যোগাযোগ করি। তখন ভরসা খুঁজে পাই। ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর তার অস্ত্রোপচার হওয়ার পর চিকিৎসক ডিভাইস স্থাপন করেন। এর কিছুদিন পর ধীরে ধীরে কথা বলতে ও শুনতে শুরু করে ফাওয়াদ। বর্তমানে সে কেজি-১ পড়ে।’ ফাওয়াদ আলমের মতো একই সমস্যা নগরীর ডবলমুরিং এলাকার
ইমাম হোসেনের ছেলে মিনহাজের। ২০২২ সালের ১৯ মে তারও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কক্লিয়ার ডিভাইস স্থাপনের পর সেও কথা বলতে শুরু করছে। বর্তমানেও মিনহাজও যাচ্ছে স্কুলে। এ বছর সে নাসার্রিতে পড়াশোনা করছে। ফাওয়াদ-মিনহাজারে মতো মাদ্রাসায় যাচ্ছে হাটহাজারীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে বিবি সালমাও। তাদের মতো কথা বলছে ও শুনছে- জারিফা, হাসিব আনান, আওনাফ মোস্তফাও। তাদের সকলের কক্লিয়ার ডিভাইস স্থাপন করা হয় সিএমএইচ’র কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ যাত্রা শুরু হয় কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টারের সেবা কার্যক্রম। যেখানে জন্মগতভাবে কথা শুনতে না পারা এবং বলতে না পারা শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কক্লিয়ার ডিভাইস স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক শিশুর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এদের বেশিরভাগ শিশুই এখন অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো চলা ফেরা, কথা বলা ও শুনতে পারছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের বিষয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ক্লাসিফাইড ইএনটি বিশেষজ্ঞ, হেড-নেক ও কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. লে. কর্নেল মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৫ বছরের নিচে জন্মগত বধির ও বোবা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সার্জারির ফলাফল অধিকতর ভালো হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যারা বিগত ১০ বছরের মধ্যে শ্রবণ শক্তি হারিয়েছেন, তারাও এ সার্জারি করে শ্রবণ শক্তি ফিরে পেতে পারেন।
বিনামূল্যে মিলছে সেবা : কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস বসাতে যেখানে পার্শ্ববর্তী ভারতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়। কিংবা সিঙ্গাপুরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা অথবা ইউরোপ-আমেরিকায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। সেখানে এ ডিভাইসটি বিনামূল্যে বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। যা চট্টগ্রাম সিএমএইচ’র কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন যে কেউ।