চট্টগ্রাম

সিডিএর কোপ এবার সিইপিজেডের ৪৫ গাছে

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এবার ‘চোখ’ পড়েছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড)। এখানকার শোভাবর্ধনকারী ৪৫টি ছোট-বড় গাছে কোপ বসাতে যাচ্ছে সংস্থাটি। কর্তৃপক্ষ থেকে জায়গাটি বুঝে নিয়ে ইতোমধ্যে গাছ কাটার সব আয়োজন শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গাছের বুক চিরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নম্বর। অবশ্য এর আগে জনরোষে পড়ে ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবি-টাইগারপাস দ্বিতল সড়ক এলাকার শতবর্ষী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মূল ফটক থেকে ফ্রি-পোর্ট মোড় পর্যন্ত নির্মিত হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার দুটি র‌্যাম্প। যার জন্য সিইপিজেডে ঢোকার মূল সড়কের ৪৫টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সিইপিজেডে ঢোকার পথে শ্রমিকদের হেঁটে চলাচলের জন্য আছে তিনটি ওয়াকওয়ে। এর মধ্যে মাঝ বরাবর ওয়াকওয়েটিতে রয়েছে সারিবদ্ধ ছোট-বড় অর্ধশত গাছ। তপ্ত রোদে এসব গাছের নিচ ধরে শ্রমিকদের হাঁটাচলা চোখে পড়ে নিত্যসময়।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছ কাটতে না দিলে র‌্যাম্প নির্মাণ হবে না। আর সিআরবি এলাকার মতো শতবর্ষী কোনো গাছ এখানে নেই। যার কারণে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন না।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগে পরিবেশ নিয়ে কেন চিন্তা করলো না এই সেবা সংস্থা, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আসলে শহরকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো মনমানসিকতা সিডিএর নেই। পরিবেশ ধ্বংস করে নগর উন্নয়ন নগরবাসী কখনও আশা করে না।’

মঙ্গলবার (২২ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, সিইপিজেডে ঢোকার মূল সড়কের প্রধান ফটক পর্যন্ত কারখানার শ্রমিকদের হাঁটার তিনটি ওয়াকওয়েতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি গাছ। সারিবদ্ধ এসব গাছের বুক চিরে ক্রমিক নম্বর লিখে দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এতে বুঝা যাচ্ছে, আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই এসব গাছ কাটা পড়বে।

গাছ কাটার খবরে ইয়াংওয়ান গ্রুপের একটি কারখানায় কাজ করা পোশাকশ্রমিক সাইফুল বলেন, ‘র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কেটে ফেলবে শুনেছি। এই ওয়াকওয়ে ধরে ইপিজেডের বেশিরভাগ শ্রমিকের হাঁটাচলা।’

এদিকে গাছ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণের খবরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে এ কাজের নিন্দা জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।

সামিম নামে একজন লিখেছেন, ‘মৃত্যুপরোয়ানা জারি হয়ে গেছে চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৪০-৫০টি গাছের। প্রতিটি গাছে নম্বর লিখে দিয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। আমাদের কি পরিবেশ ধ্বংস করে এমন উন্নয়নের প্রয়োজন আছে?’

অনিক নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘নগরে দিন-দিন গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এসব গাছে নানা রকম পাখির বাসাও রয়েছে। গাছ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণ হলে এদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাবে। ’

গাছকাটা প্রসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিইপিজেডের মূল ফটকে দুটি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সড়কের মাঝখানের ওয়াকওয়েতে র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য ৪৫টি গাছ কাটা হবে। চট্টগ্রাম সিআরবি এলাকার মতো শতবর্ষী গাছ সেখানে নেই। তাই পরিবেশের উপর প্রভাব আসবে বলে মনে হয় না।’

‘সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ র‌্যাম্পের কাজ শুরু করার জন্য জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে আগামী দুই মাস পর র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হবে’— বলেও জানান প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজ র‌্যাম্প নির্মাণ। সুতরাং গাছ কাটতে না দিলে র‌্যাম্পও হবে না।’

এদিকে গাছ কাটতে বনবিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উপ-বন সংরক্ষক এস এম কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।

এর আগে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি-টাইগারপাস দ্বিতল সড়ক এলাকার শতবর্ষী গাছসহ ৪৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নেয় নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পরে জনরোষে পড়ে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রেলওয়ে স্কুলের পাশ ঘেঁষে র‌্যাম্প নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে সংস্থাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *