চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

সীমান্ত এখন জনমানবশূন্য, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে স্থানীয়রা

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের দিন-রাত কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়।

মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনীর (বিজিপি) সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। এ কারণে মিয়ানমার সীমান্তের ক্যাম্প দখলে টানা গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল নিক্ষেপসহ বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের গ্রামগুলো কেঁপে উঠছে।

দু’পক্ষের যুদ্ধ এখন এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এর প্রভাব মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও পড়ছে।

এ অবস্থায় নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে– এমন আশঙ্কায় সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সীমান্ত এলাকায় এখনও গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি সচেতনতার জন্য মাইকিং অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যান বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন ও জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা জিরো টলারেন্সের মধ্যে আছি, সীমান্তে যেন কোনো অনুপ্রবেশ না হয় সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও অন্য বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হয়েছে।

সীমান্ত বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, সীমান্তে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে আছে। জেলা প্রশাসন ও সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে জনবল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।তিনি জানান, স্থানীয় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্রে ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

তবে যারা অর্থাভাবে আশ্রয় শিবিরে যেতে পারছেন না তাদের গাড়ি ভাড়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান টাকা দিচ্ছেন বলে জানান ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন।

এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাইশ ফাঁড়ি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ২০ পরিবার, ভাজাবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, তুমব্রু কোনার পাড়া থেকে ৩০ পরিবার, ঘুমধুম পূর্ব পাড়া থেকে ২০ পরিবার, তুমব্রু হিন্দু পাড়া থেকে ১০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের উখিয়া, মরিচ্যা, কোট বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গত সোমবার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়।

ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির পাশে। সেখানে ছৈয়দ নুর সিকদারের বাড়ির জানালার কিছু অংশ ফেটে গেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা হয়নি বলে জানান ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো।

অন্যদিকে একইদিনে নিজ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সৈয়দ আলম (৩৫) নামে একজন ব্যক্তি মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হন এক বাংলাদেশিসহ দুজন। এরপর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এলাকার লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেন।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৬৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী।

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য ছাড়াও পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, আহত সাধারণ নাগরিকরা। তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানানো হয়েছে বিজিবির পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *