দেশজুড়ে

সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে, শুকানো হয় গোবর

তিন বছর আগে চার কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইল শহরে লৌহজং নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় ফলে বাঁশের মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার করতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।

কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে না পারায় পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। সেতুতে স্থানীয়দের কেউ কেউ গোবর শুকাচ্ছেন।
সেতুতে যানবাহন উঠতে না পারায় স্থানীয়দের অধিকাংশকেই দীর্ঘ পথ ঘুরে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করতে হয়। এতে দিনের পর দিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে টাঙ্গাইল পৌর এলাকা কচুয়া ডাঙ্গা চরপাতুলী এলাকায় লৌহজং নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। টাঙ্গাইল পৌরসভার অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সনি এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু সেতুর দুই পাশের সংযোগস্থলে অ্যাপ্রোচের মাটি নেই। যার ফলে চলাচলের উপযোগী রাস্তা থাকা সত্ত্বেও এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি।

অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা সেতুর ওপর বর্তমানে গোবর শুকানো হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওই নদী পারাপারে বাঁশের সাঁকো ছিল ভরসা। জনগণের দুর্ভোগ লাগবে প্রায় ৩ বছর আগে সেতু নির্মিত হলেও এর সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে মই দিয়ে দিয়ে সেতুর ওপরে উঠতে হচ্ছে স্থানীয় ও পথচারীদের।

স্থানীয়দের মতে, সেতুটি নির্মাণ করতে প্রায় ৪ কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেই এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনেও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও সেতুতে উঠতে বাঁশ ও কাঠের মই ব্যবহার করায় মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই পাশে সড়ক থাকলেও অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে সেতুটি। স্থানীয় ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন। সেতুর দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে। এতে করে দুর্গন্ধে স্থানীয় বসবাসকারীদের থাকতে সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, সেতু চালু না হওয়ার কারণে আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে রোগী আনা-নেওয়ার অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সন্ধ্যা হলেই মই দিয়ে সেতুতে উঠতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে বাঁশ ভেঙে গেলে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

দ্রুতই সেতুটি পুরোপুরি চালু করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছেন তারা।

আবির সরকার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেতুর ওপরে মই দিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক বয়স্ক মানুষে যাতায়াত করতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন। আবার মইয়ের একপাশ ভাঙা।

স্থানীয় স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, সেতু নির্মাণ হলেও দু’পাশে মাটি ভরাট করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মই দিয়ে সেতুতে উঠতে অনেকের পায়ে লোহার পেরেক ঢুকে আহত হচ্ছেন। পৌরসভার কাছে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। রাতের বেলায় চলাচল করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এতে করে রোগী আনা নেয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। কেউ মারা গেলে লাশ নেওয়ার সময়ও সমস্যায় পড়তে হয়। কী কারণে সেতুটি এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে তা আমরা জানি না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম বলেন, মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বাঁশের সাঁকোর পরবর্তী সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করলেও সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচের মাটি ভরাট করেনি। ঠিকাদার কাজটি ফেলে রেখে চলে গেছে। ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার বসার চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করার জন্য ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেটি হলে আবার টেন্ডার করে সংযোগ সড়ক করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *