কক্সবাজারচট্টগ্রাম

সোনাদিয়ায় তাঁবুতে রাত্রিযাপন

পড়ন্ত বিকেলে সাগরে সূর্য ডোবার দৃশ্য, সন্ধ্যার গোধূলিমাখা আকাশ, ভোরের কুয়াশা মাখা সকাল, রাতের দৃশ্যসহ তাঁবু টাঙিয়ে রাত্রি যাপন করে সোনাদিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন স্থানীয় ও পর্যটকরা। শীতের মৌসুমে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সোনাদিয়া দ্বীপে পা ফেলছে অনেকেই। এই দ্বীপ ভ্রমণে স্থানীয়দের চাহিদা থাকলেও দিন-দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শীত মৌসুমে দেশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কনকনে শীতে দ্বীপের সাগরপাড়ে রাত্রি যাপনের আনন্দই আলাদা বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী। ব্যারিস্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী বলেন, আমার বাড়ি কক্সবাজার শহরেই। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর শহর থেকে সোনাদিয়া দ্বীপে এসেছিল আমার ৫০ জনের একটি দল। এখানে তাঁবুতে রাত্রযাপন করেই আজ শনিবার বিকালে ফিরে যাবো। এরআগেও একবার আমি সোনাদিয়া দ্বীপে এসেছিলাম। এখানের রাত্রিযাপনটা বেশ উপভোগ্য। দর্শনার্থী মিনহাজুল আবেদিন ও হোসাইনুল ইসলাম বলেন, অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ সোনাদিয়া। রাত্রি যাপনের সুযোগ থাকায় স্থানীয় ছাড়াও পর্যটকদের বেড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই দ্বীপে। আগেকার সময়ে সকালে গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসতেন পর্যটকেরা। এখন রাত কাটানোর ব্যবস্থাও হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও ট্যুরিস্ট গাইড দলের কারণে।

স্থানীয়রা জানান, প্রত্যেক শীতেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সোনাদিয়া দ্বীপ। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এখানে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত তাঁবুতে রাত যাপন করতেই এখানে পর্যটকেরা ভিড় করে থাকেন।

সোনাদিয়া দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক। তিনিও সাগরতীরে পর্যটকদের তাঁবু ভাড়া দিয়ে সহযোগিতা করেন। ফারুক বলেন, শীতের মৌসুমে পর্যটকের ভিড় জমে সোনাদিয়ায়।

পর্যটকদের থাকার সুযোগ-সুবিধা তেমন না থাকলেও স্থানীয়ভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ অস্থায়ীভাবে রাত্রি যাপন ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বীপে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত স্থানীয় যুবক ইমরুল হাসান রাকিব জানান, সোনাদিয়া দ্বীপে জনপ্রতি ক্যাম্পিং প্যাকেজ করা যায়। প্যাকেজে থাকবে তাঁবু, ফোমের বেড, বালিশ, কম্বল। রাতে খাবার থাকবে- বার বি কিউ অথবা ভাত, ভর্তা, মুরগি, ডাল। সকালের নাস্তা- ডিম, খিঁচুড়ি। দুপুরে খাবার- ভাত, ডাল, সামুদ্রিক মাছ, ভর্তা।

রাকিব বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শীত মৌসুমে স্থানীয় ও পর্যটক আসে সোনাদিয়া দ্বীপে। সরকারিভাবে এই দ্বীপে পর্যটন শিল্প গড়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব।

কক্সবাজার জেলা তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী, সোনাদিয়া দ্বীপটি কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাগরগর্ভে অবস্থিত। তিন দিকে সমুদ্র সৈকতঘেরা দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার। সোনাদিয়া মূলত সাগরলতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া-নিসিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খালবিশিষ্ট প্যারাবন। এটি কক্সবাজারের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের আওতাধীন দ্বীপটি।

এই দ্বীপে কক্সবাজার থেকে সরাসরি সাগর পথে যাওয়া যায়, আবার মহেশখালী এসে ঘটিভাঙ্গা ঘাট থেকে বোটে করে সোনাদিয়া যাওয়া যায়। সোনাদিয়া যাওয়ার পথে দুই পাশের সবুজ বেষ্টনী দেখতে ভালো লাগে। ছোট ছোট নৌকায় জেলেদের মাছ ধরা, প্যারাবনে মহিষের পালের হেঁটে যাওয়া এসব মুগ্ধ করে রাখে দর্শনার্থীদের।

জানা যায়, সোনাদিয়াকে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য এই দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) বরাদ্ধ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বেজা সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের জন্য পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক এলাকা, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে সরকারের কাছ থেকে এই জমি বরাদ্ধ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *