সৌদি থেকে ফিরছেন ৮ প্রবাসী, তিন শতাধিক পরিবার অনিশ্চয়তায়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও আহতদের সুস্থতা কামনায় সৌদি আরবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অপরাধে আটক বাংলাদেশি প্রবাসীরা সদ্য মুক্তি পেয়েছেন। যদিও তাদের কর্মস্থলে ফেরার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এর ফলে তাদের পরিবার এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় তিন শতাধিক পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরবের মাহাইল থানা পুলিশ তাদের আটক করে। আটক ৮ প্রবাসীকে কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা।
কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চিত ৮ প্রবাসী হলেন বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনা গ্রামের মাওলানা হাফেজ রহমত উল্লাহ, সরল ইউনিয়নের মিনজিরিতলা গ্রামের মাওলানা হাফেজ খলিলুর রহমান, শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর গ্রামের হাফেজ ওমর ফারুক ও চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল গ্রামের জয়নুল আবেদীন, সাতকানিয়ার সামিউল ইসলাম, এঁওচিয়া গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ সিকদার, একই এলাকার সেলিম উল ইসলাম ও বান্দরবানের মো. আশরাফুল ইসলাম।
প্রবাসী সেলিম উল ইসলামের ছেলে মো. কাউসার বলেন, “সৌদি আরবে আমার বাবার একটি পেট্রোল পাম্প ও সুপারশপ এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে চাকরি করেন প্রায় তিন শতাধিক বাঙালি প্রবাসী। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এনএসআই কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত সাতজনকে জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তার মাধ্যমে মুক্ত করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আটককৃতদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে আট পরিবারসহ তাদের ওপর নির্ভরশীল তিন শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।”
বাঁশখালীর মাওলানা হাফেজ রহমত উল্লাহর ভাগ্নে এহসানুল হক বলেন, “আমার মামাসহ আরও কয়েকজন পরিবার-পরিজন নিয়েই সৌদি আরবে বসবাস করছেন। আমার মামা হাফেজ রহমত উল্লাহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৌদি আরবের স্থানীয় শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় আবেদন-নিবেদন করেও তাদেরকে কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে সরকারিভাবে এখনও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না।”
জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের আনন্দে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ও আহতদের সুস্থতা কামনায় ১৬ আগস্ট সৌদি আরবের মাহাইলে এক দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন প্রবাসীরা। ওই সভায় আবহাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রবাসীরা যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ‘আইন অমান্যের’ অভিযোগ তুলে ১৮ বাংলাদেশি প্রবাসীকে ধরে নিয়ে যায় সৌদি পুলিশ। সেখান থেকে ১০ জনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাঁশখালীর চারজনসহ ৮ জনকে কারাগারে পাঠায় সৌদি পুলিশ। আটক হওয়া অপর তিনজনের বাড়ি সাতকানিয়া এবং একজনের বাড়ি বান্দরবান।
সৌদি আরবে প্রবাসী জয়নাল আবেদীনের পাঁচটি চেইন শপ রয়েছে। তার স্ত্রী রুজি আক্তার ডেজি বলেন, “আমার স্বামী ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। তিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আর আহতদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমার স্বামী কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এনএসআই কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফেরত পাঠানো যাবে। সৌদি আরবে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় এই ধরনের অনুষ্ঠানকে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কোনো ধরনের সাজা না হওয়ায় তাদের মুক্ত করা ত্বরান্বিত হয়েছে। সৌদি সরকারের আইন মেনে চলার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।”
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, “আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। বাঁশখালীর চারজনসহ ৮ প্রবাসীর কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।”