স্ট্রোকে মৃত্যু ভেবে দাফনের প্রস্তুতি, গোসলে নিয়ে দেখা গেল ‘খুনের চিহ্ন’, পলাতক স্বামী
গার্মেন্টস কর্মী নাছিমা বেগম প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কর্মস্থলে চলে যান। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার বেশি মা’কে ঘুমাতে দেখেছে – এমনটা কখনও হয়নি নাছিমা বেগমের ছেলে কামরুল হাসান ইমনের।
তবে শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালটা ছিল ব্যতিক্রম। সকাল ৮টা পেরিয়ে গেলেও মা ঘুম থেকে না উঠায় মাকে ডাকতে গিয়ে দেখে নাছিমা বেগম গায়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে। ইমন ও তার বোন কানিজ ফাতেমা ইমু ধারণা করে শুক্রবার ছুটির দিন তাই তাদের মা আরাম করছে। কিছু সময় পর ইমন এসে মাকে আবারও ডাকলে কোন সাড়া না পেলে স্পর্শ করে দেখে হিমশীতল হয়ে আছে মায়ের দেহ। এ সময় সে পরিবারের অন্যান্যদের ডাকলে তারা ধারণা করে স্ট্রোক করে রাতের কোন সময়ে মারা গেছে নাছিমা।
এই ঘটনা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানালে তিনি মরদেহ দাফন করতে বলেন। তবে বিপত্তি বাধে লাশ গোসলে নিয়ে গেলে। গোসলে নিয়ে গেলে দেখা যায় নাছিমার গলায় কালো দাগ এবং জিহ্বা কিছু্টা বের করা। এমনকি তার কানেও দাগ। এই ঘটনা দেখে সন্দেহ জাগলে তারা ৯৯৯ এ কল করে এবং ইউপি সদস্যকে জানায়। পরে কর্ণফুলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং প্রাথমিক সুরতহালে ওই নারীকে খুনের চিহ্ন দেখতে পান।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে। শুক্রবার (৫ জুলাই) উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের খালেক মেম্বার বাড়ি থেকে নাছিমা বেগম (৩৫) নামে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, নাছিমা বেগম মো. সোলায়মানের স্ত্রী। সোলায়মানের বাড়ি পটিয়া শান্তিরহাটের মালিয়াপাড়া। নাছিমার পিতা চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের সেকান্দর মিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নাছিমা একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার প্রথম স্বামী আকতারের ঘরের ছেলে কামরুল হাসান ইমন (১৮) এবং মেয়ে কানিজ ফাতেমা ইমুসহ (১৩) চরলক্ষ্যা গ্রামের মহিউদ্দিনের ভাড়া ঘরে এক বছর যাবত বসবাস করে আসছেন।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে নাছিমার দ্বিতীয় স্বামী মো. সোলায়মান ভাড়া বাসায় আসেন। মেয়ে ইমু তখন বাসায় ছিলেন। রাতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং মেয়ে তা শুনতে পায়। পরবর্তীতে সকালে সোলায়মানকে ঘরে দেখতে না পেলেও খাটে নাছিমার লাশ পায় তার স্বজনরা। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালালেও সোলায়মানকে আটক করতে পারেনি। সে পালিয়ে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার রাতে ঝগড়ার একপর্যায়ে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার স্বামী সোলাইমান পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, নিহত ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পলাতক স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।