স্ত্রীকে গলাটিপে মেরে স্ট্রোক বলে চালানোর চেষ্টা, স্বামী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে নাছিমা বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূর স্ট্রোকে মৃত্যু ভেবে লাশ গোসলে নেওয়ার সময় মেলে ‘খুনের আলামত’। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন ওই গৃহবধূর স্বামী মো. সোলাইমান। এ ঘটনার পর পুলিশ টানা দুইদিন অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীর কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ার জের ধরেই তিনি ঘটিয়েছেন এ হত্যাকাণ্ড।
শনিবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত ৩টার দিকে পটিয়া থানার জিরি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মালিয়ারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মো. সোলাইমান (৪৫) একই গ্রামের মৃত আবদুল হাফেজের ছেলে।
ভিকটিম নাছিমা বেগম কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের সেকান্দর মিয়ার মেয়ে। একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খালেক মেম্বারের বাড়ির মহিউদ্দিনের ভাড়া ঘরে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ দিবাগত রাত ১টার দিকে নাছিমার দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ সোলায়মান ভাড়া বাসায় আসেন। সে সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাতের কোনো একসময় সময় সোলায়মান ঘর থেকে বেরিয়ে যান। সকাল ৮টার দিকে মেয়ে কানিজ ফাতেমা ইমু তার মা ঘুমাচ্ছে মনে করে আর ডাকেননি। পরে ছেলে কামরুল হাসান ইমন ঘরে এসে তার মা’কে ডাকলে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে হাত-পা ধরে দেখে ঠান্ডা হয়ে আছে। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা ধারণা করে নাছিমা ‘স্ট্রোক’ করে মারা গেছেন। পরে তারা মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি শুরু করেন।
এদিকে, নাছিমাকে গোসলে নিয়ে গেলে তার গলায় কালো দাগ এবং জিহ্বা বাহির করে দাঁতের কামড় দেওয়া অবস্থা দেখে সন্দেহ হয়। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে কর্ণফুলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির বলেন, ‘সোলাইমান প্রায়ই ভিকটিম নাছিমাকে মারধর করতো। সবশেষ সে নাছিমাকে এক লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়। নাছিমা গার্মেন্টসের চাকুরি করার কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। একপর্যায়ে নাছিমাকে তার স্বামী সোলাইমান মারধর করে গলাটিপে ধরে হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর কাথাঁ দিয়ে মুখ ঢেকে পালিয়ে যায়।’
‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সোলাইমান মোট ৩টি বিয়ে করেছে। নাছিমা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে সে মালিয়ারা গ্রামের বিভিন্ন বন, জঙ্গল ও ডোবার মধ্যে লুকিয়ে ছিল। দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ করে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।’ বলেন ওসি।