রাজনীতি

স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, এ ধরনের দলকে সমর্থন করা যাবে না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘তবে আমরা মনে করি, মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার, রাজনীতি করার।’

বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলেন।

সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আদেশটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে— এ প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না, সে যে দলই হোক। আমাদের সংবিধানে যেকোনও ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সংগঠন করার। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে।’

ফখরুলের ভাষ্য, ‘আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না। কিন্তু আমরা মনে করি, মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার, রাজনীতি করার।’

তিনি মনে করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদানকে খাটো করতে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তার দাবি, ‘এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আপনারা দেখবেন, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কতগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে— যা বাংলাদেশে যে বিপ্লব, সেটাকে তারা নস্যাৎ করতে চায়। কতগুলো রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়। যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে তারা যে সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্রচার চালিয়েছিল, এটা বোধ হয় এক-দুই পারসেন্টও সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দখলদারি। এগুলো কিন্তু একটা ক্যাম্পেইন।’

‘আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আবারও আগের মতো এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। মনে রাখত হবে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।’

‘২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত এক-এগারোর সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনীতিকীকরণের। এমনকি ওই সময়ে আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল। এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না’ বলেন ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জন্যই আলোচনা দরকার। যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। আমরা কী চাই, ওনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ–আলোচনা তো হতে হবে। সে জন্য বলেছি, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতি দ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে, আমার ওই চিন্তাটা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে।’

‘সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপ চায়, গণতন্ত্র চায়। মানুষ নির্বাচন চায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।’

বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিরাজনীতিকীকরণের কোনও লক্ষণ দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘না, আমি এমন লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। আমার একটা সতর্কের কথা আছে। কিছু চেহারা আছে তো? এ চেহারাগুলোকে দেখলে আমরা ভয় পাই।’

‘তবে যাদের কোনও দিন দেখা যায়নি, তারা সামনে চলে আসছেন’ উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘হঠাৎ করে তারা মিডিয়াতে ফ্রন্ট পেজে চলে আসছেন। তাদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *