চট্টগ্রাম

স্বামীর অবৈধ আয়ে কোটিপতি স্ত্রী!

চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন আবদুল বারিক। চাকরিতে যোগ দেন ৩৪ বছর আগে। দুই যুগ চাকরির মেয়াদে পেয়েছিলেন একটি প্রমোশনও। কিন্তু চাকরিই ছিল তার ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার হাতিয়ার। চাকরিকালে তিনি গড়েছেন ঝাঁ চকচকে অট্টালিকা, কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট এবং জমিও।

শুধু তাই নয়, কাস্টমসের সাবেক এই ‘বড়বাবু’র স্ত্রীও অন্তত দুই কোটি টাকার মালিক। অবৈধ কামাইয়ের টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছেন হাসপাতালে এবং অটোমোবাইলস ব্যবসায়। দামি গাড়ির পাশাপাশি ছেলের নামে আছে অর্ধশতক জায়গাও। এবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই সাবেক কাস্টমস কর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (২১ মে) দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-সহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন বাদী হয়ে একই কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল বারিক ও তার স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন খানমকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল বারিক ও তার স্ত্রীকে সম্পদ বিবরণী চেয়ে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে নোটিশ দেয় দুদক। জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাইয়ের পর জানা গেছে, ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম ১ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক।

এজাহারে আরও বলা হয়, পেশায় গৃহিণী হয়েও স্বামীর অবৈধ আয়ে এসব সম্পদের মালিক হন ফেরদৌস ইয়াসমিন খানম। অপরদিকে, আবদুল বারিক ১ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবদুল বারিক চট্টগ্রাম কাস্টমসে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান। ২০১০ সালে তিনি রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি লাভ করেন। আর অবসর নেন ২০১৪ সালে। কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি অবৈধ কামাইয়ে নিজের ও স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিনের নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে গড়েন অঢেল সম্পদ।

সূত্র বলছে— নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি এবং খুলশীতে ফ্ল্যাট, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় বিলাসবহুল ভবন, হালিশহর সোনালী আবাসিক এলাকায় নিজের ৪ গণ্ডা জমির ওপর ভবন, ঢাকার আশকোনায় নুর কাদের হাইটসে ফ্ল্যাট, মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ে প্রায় সাড়ে ৫ কাঠা জমি, ঢাকার রামচন্দ্রপুরে ৩০ কাঠা জমি, নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে টিনশেড ঘরসহ ৩ কাঠা জমি, বেগমগঞ্জের রশিদপুরে ৭ কাঠারও বেশি জমি, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার রশিদপুরে ছেলের নামে ৩০ কাঠা জমি কিনেছেন আব্দুল বারিক।

এছাড়া কোটি টাকার অংশীদারিত্ব রয়েছে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল, ফেনীর উত্তরা হাসপাতাল, আলকেমী হাসপাতাল এবং এইচবি অটোমোবাইলসে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন জানান, সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাইয়ে তারা সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল বারিক ও তার স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। তাই একটি মামলায় স্ত্রীসহ আবদুল বারিককে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় শুধু আবদুল বারিককে আসামি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *