চট্টগ্রাম

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর শিশু পাচারের মামলা

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন পলি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া যমজ দুই সন্তানকে তিন লাখ টাকায় দত্তক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বামী-স্ত্রী। আদালতে শিশু পাচারের অভিযোগে স্বামীসহ দত্তক নেওয়া নারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী মা মুন্নী আক্তার। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর মেট্টো পুলিশ যমজ দুই শিশুকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেন।

শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া রাজানগর ইউনিয়নের বিএ মাস্টার বাড়ি থেকে ভিকটিম শিশু রায়ানকে ও ফাহমিদাকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকা হতে উদ্ধার করেন। যমজ দুই শিশুর বয়স মাত্র ৫ মাস ৫ দিন।

সূত্রে জানা যায়, মানবপাচার অপর দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে মুন্নী আকতার নামে ভুক্তভোগী নারী মানবপাচার অভিযোগে একটি মামলা (নং-০৯/২৪) দায়ের করেন। বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি সকালে পাঁচলাইশ থানাধীন পলি হাসপাতালে বাদি মুন্নী আক্তারের যমজ সন্তান প্রসব হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে তখন দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ রোকসানা আকতার ও ডাঃ মামুন। এ সময় মুন্নী আক্তারের স্বামী মো. হাবিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার দিনেই মুন্নীর প্রসবকৃত যমজের এক ছেলে ও এক মেয়ে বাচ্চাকে তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেন। মুন্নীর বড় মেয়ে রূমা আকতার ও ছেলে রেহান এ ঘটনা দেখে প্রতিবাদ করলে তাঁদের হাবিবুর রহমান হাসপাতালের বাথরুমে আটকে রাখেন।

তাৎক্ষণিক মামলার বাদি মুন্নী আক্তার এই বিষয়ে অভিযোগে করে ডাঃ রোকসানা আকতার ও ডাঃ মামুনকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানায় বাচ্চা দুইটি অসুস্থ বিধায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান দুই শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গেছেন বলে তথ্য দেন।

পরে যমজ বাচ্চা শিশুদের না পেয়ে মা মুন্নী আক্তার বিজ্ঞ আদালতে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম মেট্রো’কে নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলাটি তদন্তে করতে গিয়ে পিবিআই পুলিশ চাঞ্চল্যকর কিছু পান। এতে উঠে আসে মামলার বাদি মুন্নী আক্তার বাবুর্চির সহকারি হিসেবে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক পর্যায়ে মুন্নী সন্তান সম্ভবা হন।

অপরদিকে, রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর ইউনিয়নের আবুল হাশেমের স্ত্রী শিরু আকতারের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিনি নবজাতক পুত্র সন্তান দত্তক ও বোয়ালখালী মোহরা এলাকার হাসান মুরাদের স্ত্রী রুনা আকতারের কোন মেয়ে সন্তান না থাকায় তিনিও নবজাতক কন্যা সন্তান দত্তক নিতে আগ্রহী ও সন্তান খুঁজছিলেন।

উভয়ের সাথে ঘটনাক্রমে সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সেলিমপুর ছিন্নমূল এলাকার মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী রাশেদা বেগমের সাথে পরিচয় হয়।

আর সেই রাশেদা বেগম তাঁদের দুজনকেই আশ্বাস দেন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে তাঁদের উভয়কে পছন্দমত নবজাতক ছেলে-মেয়ে দত্তক এনে দেবেন।

পরে রাশেদা বেগম কথা অনুযায়ী শিরু আকতার ও রুনা আকতারের সাথে সন্তান সম্ভবা থাকা মামলার বাদি মুন্নীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার রাশেদা বেগমকে ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।

এছাড়াও বাদীনির প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ প্রদানেও তাঁরা রাজি হন। রাশেদা বেগম বিষয়টি মামলার বাদি মুন্নীর সাথে আলোচনা করলে তিনিও ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তার গর্ভে থাকা দুই সন্তানকে দত্তক দিতে রাজি হয়।

এমনকি বাদি মুন্নী আক্তার বিষয়টি তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমান সাথে আলোচনা করলে স্বামীও অর্থের বিনিময়ে দত্তক দিতে রাজি হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী (আল্ট্রা করে আগে থেকেই অবহিত) এক ছেলে সন্তান ও এক কন্যা সন্তান প্রসব করলে নগদ ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই যমজ শিশুকে দত্তক দেন।

এ কাজের মধ্যস্থতাকারী রাশেদা বেগম ১ লাখ টাকা নেন। ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে মামলার বাদি মুন্নীর স্বামী (মামলার ১নং বিবাদী) হাবিবুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেলে মুন্নী আক্তার তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এতে নানা ঘটনা বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানার নেতৃত্বে ওসি মাসুদ পারভেজ, সঙ্গীয় ফোর্স এসআই মো. শাহেদুল্লাহসহ টানা কয়েক দিনের অভিযানে দুই যমজ শিশুকে রাঙ্গুনিয়া ও নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর প্রধান এসপি নাইমা সুলতানা বলেন, ‘বর্তমানে শিশু সন্তান দুটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর হেফাজতে রয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে। বাকিটা আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *