হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ
দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ বা ২ কোটি ৫ লাখ মানুষ কোমর ব্যথা বাতে (লাম্বার স্পন্ডিলাইটিস) ভুগছে বলে জানিয়েছে প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্ট। সংগঠনটি জানায়, ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশের ১১ কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, যা মোট প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ৭ শতাংশ।
শনিবার (১১ মে) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে বাত ব্যথা রোগীদের সচেতনতামূলক এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
পিএনআরএফআর অষ্টমবারের মতো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বাত ব্যথা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএনআরএফআর ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নীরা ফেরদৌস।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশে বাত ব্যথার রোগীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বিশ্বে দেশভেদে ২৫-৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন গিরা বা পেশীর ব্যথায় ভুগছেন। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশী ভুগে থাকেন। গিরাব্যথার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কাজ করতে অক্ষম হয়ে যায়। হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন নারীরা বেশি। পাশাপাশি শারীরিক স্থুলতা ও হাঁটুতে আগে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যৌবন বয়সের বাত রোগীদের স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিসে (এসপিএ) আক্রান্তের হারও উদ্বেগজনক। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশের ১ শতাংশ বা সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। এতে মেরুদণ্ডের সাথে গিট বা অস্থিসন্ধি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রবন্ধে বলা হয়, যেকোনো ধরনের ব্যথায় ভোগা মানুষ নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস ‘গাউট’ রোগের চিকিৎসা নেন। ইউরিক এসিডহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। অথচ গাউট সমস্যায় ভুগছেন দেশের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বা সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। দেশের ৩৩ শতাংশ বা সাড়ে তিন কোটি মানুষের শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। তবে তারা গাউটের রোগী নন। অথচ গাউটের ওষুধ সেবন করেন। এই ওষুধ সেবনে এক সময় শারীরিক অন্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশের প্রায় ১১ লাখ মানুষ সোরিয়েটিক আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন। এটি গিঁটের এক ধরনের প্রদাহ, যা সোরিয়াসিস বা চর্ম রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত গাঁটগুলো ফুলে যায় এবং প্রায়ই যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে।
প্রবন্ধে অন্যান্য দেশের বাত ব্যথা রোগীর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। বলা হয়, একসময় এশিয়ায় প্রতি লাখে ৩০-৫০ জন মানুষ এসএলই বা লুপাস রোগে ভুগতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৯৩ সালে প্রতি লাখে ১৪-৬০ জন মানুষ লুপাস সমস্যায় ভুগতেন। তবে ভালো চিকিৎসার কারণে এই রোগীর সংখ্যা কমছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন। ২০২২ সালের গণশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৫০ উর্ধ্ব বয়সী মানুষ প্রায় ৩ কোটি। সেই হিসেবে দেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এই রোগে ভুগছেন। তবে উদ্বেগের বিষয় এই হাড়ক্ষয় রোগে মেরুদন্ডের হাড় ভাঙার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি এবং এই রোগের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় ৮ গুণ বেড়ে যায়। অবশ্য আশার কথা ওষুধ সেবন করে ৬-১২ মাস চিকিৎসা করলে এই রোগ থেকে হাড় ভাঙার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে কমে আসে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিএনআরএফআরের চেয়ারম্যান ও এশিয়া প্যাসিফিক লীগ অফ অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজির ভাইস প্রসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে পিএনআরএফআরের পক্ষ থেকে ২১ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা জানান, দেশে বাতের কষ্টে ভোগা মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনা করা গেলে বাতের যন্ত্রণা থেকে অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন রোগীরা। কিন্তু সঠিক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা না করা গেলে রোগীরা খুবই ঝুঁকিতে পড়বেন।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, বাতের রোগীদের ওপর গবেষণা বাড়ানো গেলে আরও সুনির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদিও দেশে বাত ব্যথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংকট দিন দিন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।