রাজনীতি

হাসিনা-কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনে যা বলা হয়েছে

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি এ মামলার আবেদন করেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, সম্প্রতি কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে দমানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দমনপীড়ন শুরু করে ১ ও ২ নম্বর আসামির (শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের) নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

আবেদনে আরও বলা হয়, বিগত ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার সময় মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় মোহাম্মদপুর বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানায় আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা তার লাশ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

আরজিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে কোনো মামলা হয় নাই। যেহেতু সুদূর পঞ্চগড়ে নিহত আবু সায়েদের গ্রামের বাড়ি এবং তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। এ কারণে সচেতন নাগরিক হিসেবে অত্র বাদি আবু সায়েদকে হত্যার বিচার দাবি করে এ মামলা দায়ের করলেন।

এতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়া পুলিশ আর্জির বর্ণিত আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্যরা গুলি করে আবু সায়েদকে হত্যা করেছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ১ নম্বর আসামি আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছে। ৩ নম্বর আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ৪ নম্বর আসামি হারুন-অর-রশীদ এবং ৬ নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার আন্দোলন ও ৭ নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ৫ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেয়।

অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক। বিধায় বাদী অত্র মামলা দায়ের করলেন। আবু সায়েদ হত্যার তদন্ত হলে অজ্ঞাতনামা আরও তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পুলিশের সদস্যদের নাম উঠে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *