তথ্যপ্রযুক্তি

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফাঁদ : ভিপিএন ইউজ করেছিলেন…

মো. তানভীর; চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপে অনেক সময় নানা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। পরে পরিচয় জেনে হয় কথোপকথনও। তবে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে আসা একটি ফোন রিসিভ করেই ‘বিপদে’ পড়েন তিনি। ওই নম্বরের প্রোফাইলে ছিল পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজনের ছবি। পরে তিনি রিসিভ করতেই জানানো হয়— ‘কক্সবাজার সদর থানা থেকে ফোন করা হয়েছে। আর তাদের সার্ভারে তানভীরের নম্বরটি যুক্ত হয়েছে। তাই তারা কোনো ‘ক্রাইম সাসপেক্ট’ কিনা জানতেই এ ফোন করা হয়।’ এটিই ছিল প্রতারণার প্রথম ধাপ…।

শুধু তানভীরই নন; এভাবে কর্মজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ আরো অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপে ফোন পাচ্ছেন, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। আর এভাবেই নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে ভুক্তভোগীর হোয়াটসঅ্যাপ এবং চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য। আর হ্যাক হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়।

যেভাবে তানভীরের হোয়াটসঅ্যাপ প্রতারকের

মো. তানভীর বলেন, ‘একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। আর সেটির প্রোফাইলে ছিল পুলিশের পোশাক পরিহিত কয়েকজনের ছবি। পরে আমি কল রিসিভ করা মাত্রই থানা থেকে ফোন করার কথা জানায়। তখন আমি একটু ভয় পেয়ে যাই। পরে তারা বলেন, আপনার নম্বরটি আমাদের পুলিশের সার্ভারে সংযুক্ত আছে। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে বলা হয়, ‘দেশে নেট সংক্রান্ত সমস্যার কারণে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে অপরাধ করেছে। তাদের নম্বরগুলোই আমাদের এখানে যুক্ত হয়েছে। তাই আপনি কোনো সাসপেক্ট কিনা সেজন্যই ফোন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমিও তাদের কথায় একটু ভয় পেয়েছি। কারণ, দেশের ইন্টারনেটের যে সমস্যা ছিল। তখন ভিপিএন ব্যবহার করি।’ তবে তাদের বলি— ‘স্যার আমি তো এ ধরনের কোনো কাজ করিনি। আমি শুধু ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেছি।’

তখন ওপাশ থেকে বলা হয়— ‘যদি আপনি এ ধরনের কোনো সাসপেক্ট না হয়; তাহলে আপনাকে লিংকের মাধ্যমে একটা ফরম পাঠাবো। সেটিতে আপনার নাম-ঠিকানা; সবকিছু সঠিকভাবে পূরণ করে সাবমিট করবেন। আর এটির মাধ্যমে আমরা আপনার নম্বরটি সার্ভার থেকে ডিলিট করে দিব। তাহলে আপনার আর কোনো সমস্যা হবে না। পরে আমিও তাদের কথামতো পাঠানো লিংকে প্রবেশ করি এবং সেটি পূরণ করি। তবে তখন পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝতে পারিনি’ — যোগ করেন তিনি।

পরে আমার এক পরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। তিনি বলেন, ‘আপনি মেডিকেলে কেন? কি হয়েছে আপনার?’ এ কথা শুনে আমি অবাক হই; উনাকে উল্টো আমি জিজ্ঞেস করি— ‘আমি মেডিকেল কেন থাকবো? আমি তো বাসায়।’ তখন তিনি আমাকে জানান, ‘আপনার হোয়াটসঅ্যাপ থেকেই তো মেসেজ পাঠালেন। আপনি মেডিকেলে; তাই টাকা পাঠাতে।’

‘পরে তিনি আমাকে সেই মেসেজের স্ক্রিনশট পাঠান। সেটি দেখে আমি বুঝতে পারি— আমাকে অপরিচিত নম্বর থেকে কল নম্বরটি প্রতারকের। আর আমাকে ফাঁদে ফেলে আমার হোয়াটসঅ্যাপ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এছাড়াও, আমার হোয়াটসঅ্যাপে সেভ থাকা পরিচিতদের নম্বরে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে মেসেজ পাঠাচ্ছে। সেই সঙ্গে খুঁজছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকাও।’

এতেই শেষ নয়; তারা আমার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমার এক স্যারের নম্বর নিয়েছে। উনাকেও আমার মতো থানা থেকে কল করার কথা জানিয়ে একই সমস্যার কথা জানান। তবে তিনি হয়তো কোনোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন; তাই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেননি।

এদিকে, ওই নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে রিং পরলেও বারবার লাইন কেটে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই ওই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের বায়ো’তে লেখা হয়— ‘ওসি রাকিব স্যার’। আর কিছুক্ষণ পরই ফিরতি কল দিলেও ভয়েস শুনেই কেটে দেন। আর সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন থেকেও চলে যান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) অবগত করা হলে তিনিও এমন ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান। ওসি মোহাম্মদ রকিবুজ্জামান সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘জ্বি, আমিও জানতে পেরেছি। এমন ঘটনায় আমাকে কয়েকজন বিষয়টি জানিয়েছেন। এটা মূলত প্রতারণা করার একটা নতুন ফাঁদ। তাই সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *